Advertisement
E-Paper

বৌমাকে গণধর্ষণের বিচার পেতে থানায় শ্বশুর

গত ১৪ এপ্রিল রাতে তাঁর ছেলের খোঁজে বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী। তারা গুলি ছুড়তে পালিয়ে যায় ছেলে। সেই রাগে বৌমাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরের দিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ হাত গুটিয়ে থেকেছে বলে দাবি পরিবারের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২০

বিচার পেতে ধর্ষিতা বৌমার কাপড় নিয়ে গিয়ে থানায় জমা দিলেন বৃদ্ধ শ্বশুর। সেই সঙ্গে তিনি থানায় দিয়ে এসেছেন, তাঁদের ঘরে পড়ে থাকা একটি মানিব্যাগ। ওই মানিব্যাগ অভিযুক্তদেরই কারও বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

গত ১৪ এপ্রিল রাতে তাঁর ছেলের খোঁজে বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী। তারা গুলি ছুড়তে পালিয়ে যায় ছেলে। সেই রাগে বৌমাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরের দিনই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ হাত গুটিয়ে থেকেছে বলে দাবি পরিবারের। অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই শিকার হয়েছেন ওই বৃদ্ধের বৌমা। তাঁর ছেলে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অনুগামী। গণধর্ষণে অভিযুক্তেরা দলের সত্যেন রায় গোষ্ঠীর বলে দাবি। দু’পক্ষই অবশ্য দাবি করেছে, এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই।

কিন্তু আরএসপির জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘শাসক দলের ঘরোয়া কোন্দল জড়িত বলেই পুলিশ এমন মারাত্মক অভিযোগের পরেও হাত গুটিয়ে ছিল। তাই অভিযুক্তেরা কেউই ধরা পড়েনি।’’ তাঁর কথায়, বরং, তাদের হুমকির জেরে ওই মহিলাই নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছিলেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিশ্বনাথবাবু বৃহস্পতিবার ওই মহিলার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর পরে ঘটনার কথা জানাজানি হয়। তার পরেই সাহস পেয়ে ওই মহিলার শ্বশুর ওই শাড়ি ও মানিব্যাগ পুলিশের হাতে তুলে দেন। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘ঘটনার পরে সাত দিন কেটে গেলেও পুলিশ যে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত পর্যন্ত করেনি, তার প্রমাণ ওই মানিব্যাগটি। মানিব্যাগটি ওখানেই পড়েছিল। এখন নির্যাতিতার শ্বশুরকে গিয়ে তা পুলিশকে দিতে হল।’’

মানিব্যাগটিতে অভিযুক্তের ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র এবং দশ টাকার কয়েকটি নোট মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তপন থানা থেকে মহিলার শাড়ি এখনও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা বধূর জবানবন্দিও পুলিশ নথিভুক্ত করেনি। ধর্ষণের অভিযোগও কেবল এক জনের বিরুদ্ধেই করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা দায়ের করে তাদের বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন। অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের পাশে যে দল দাঁড়াবে না, তা বৃহস্পতিবারই জেলা নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তার পরেও পুলিশ কেন তৎপর নয়?

জেলা পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান বলেন, ‘‘শুক্রবার সকাল থেকে তপন থানার আইসি প্রীতম সিংহের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী ওই এলাকায় অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে। তবে তার আগেই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। মহিলার শাড়ি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।’’ এ দিন তপনের বিডিও সিদ্ধার্থ সুব্বা বলেন, ‘‘প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথবাবু আমাকে অবহিত করার পরই আইসি-র সঙ্গে কথা বলেছি।’’ রাতে ওই এলাকায় অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ অভিযানে যায় বলে বিডিও জানিয়েছেন।

তবে এত কিছুর পরেও ওই গৃহবধূ এ দিনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। তাঁর স্বামীও এলাকা ছাড়া। তৃণমূলের তপন ব্লক সভাপতি মুকুল দে বলেন, ‘‘অন্যায়কারীদের পাশে দল দাঁড়াবে না। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। ওই পরিবারটি নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরতে পারেন।’’ কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের এক জনও ধরা না পড়ায় ওই বধূ চরম আতঙ্কের মধ্যে নাবালিকা মেয়েদের নিয়ে অন্য এলাকায় প্রতিবেশীর আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আর বাড়ি আগলে ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন বধূর বৃদ্ধ শ্বশুর ও শাশুড়ি।

Justice Father-in-law rape case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy