জোড়া হাতির আক্রমণে জেরবার হল ডুয়ার্সের ব়ড়দিঘী চা বাগান। গত শনিবার গভীর রাতে গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে একটি দাঁতাল ও একটি মাকনা হাতি ঢুকে পড়ে বাগানে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে তাণ্ডব চালিয়ে ভেঙে ফেলে বাগানের আটটি শ্রমিক আবাস। ঘর ভেঙে গুরুতর ভাবে জখম হন এক মহিলা শ্রমিক। জখম শ্রমিক মুক্তা সোরেনকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার আগে বড়দিঘী বিটের বনকর্মীদের একটি আবাসনেও হামলা চালায় ওই দু’টি হাতি। গুরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া এই চা বাগানে চলতি বছরে আটবার হাতির হামলা হল বলে বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এ বছরেই হাতির হামলায় বাগানের টিলাবাড়ি ডিভিশনে এক বাসিন্দার মৃত্যুও হয়েছে। এ দিন বাগানের মহেন্দ্র লাইন ও রঘুনাথ লাইনে হামলা চালায় হাতি দু’টি।
রবিবার সকালে মালবাজারের হাসপাতালের বিছানাতে শুয়ে মুক্তা দেবী বলেন, ‘‘আগে পাকা শ্রমিক আবাস ছিল। ভূমিকম্পে সেটাতে ফাটল ধরে যায়। পরে কাঠ, টিন দিয়ে এই ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল।’’ সুস্থ হয়ে বাগানে ফিরে ফের রাত কাটাবার স্থায়ী আস্তানা তৈরির লড়াই শুরু করতে হবে বলে জানান তিনি। বারবার হাতির হামলা চলতে থাকায় শ্রমিকদের মনোবল ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার ইন্দ্রজিত সিংহ চহ্বাণের। তিনি বলেন, ‘‘হাতি তাড়াতে বাগানে শব্দবাজি, তীব্র আলো চেয়ে বনদফতরের কাছে আর্জি দিয়েছিলাম। সেই সাহায্যও আমাদের মেলেনি।’’ বনদফতরের ভরসাতে না থেকে রবিবার রাত থেকেই ট্রাক্টরে করে বাগানের পাঁচজন করে শ্রমিককে দিয়ে বাগানে রাতটহল শুরু করানো হবে বলে জানান তিনি। এই দলটি কোথাও হাতি ঢুকছে দেখলেই সকলকে সতর্ক করে দিয়ে হাতি তাড়াতে উদ্যোগ নেবে। তবে বড়দিঘীতে বনদফতরও নিরুপায় হয়ে পড়েছে বলেই জানাচ্ছেন বনকর্মীরা। বড়দিঘী বিটের যে আবাসটি হাতি এ দিন ভেঙে দেয় সেখানে যে পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো নেই সেই খবর এ দিন বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। গভীর পরিখা কেটে বিদ্যুতের বেড়া লাগিয়ে বিটের দফতরকে ঘেরার দাবি থাকলেও সেটা হয়নি এখানে। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের ঘর রক্ষা করতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বনকর্মীদের। বিটটিকে হাতির হামলা থেকে কীভাবে বাঁচানো যায় সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এ দিন জানান জলপাইগুড়ি বনবিভাগের ডিএফও বিদ্যুত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষের নিজেদের রাতটহল শুরুর সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’’ তাঁদের আলো ও শব্দবাজি দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান বিদ্যুতবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy