Advertisement
E-Paper

বুজে গেল বেড়ার ফাঁকটুকু

ঢাকার গুলশনকাণ্ড ছায়া ফেলেছে এ পারের ইদের সমারোহে। প্রতি বছরই আকাশে ইদের চাঁদ দেখে মিষ্টি হাতে কাঁটাতারের বেড়ার দিকে ছুটে যেতেন এ পারের রফিক, লতিবুররা। ওপার থেকে উপহার নিয়ে আসতেন তাঁদের আত্মীয়রা। থাক না কাঁটাতারের বেড়া। তাঁর ফাঁক দিয়েই দেখা-সাক্ষাৎ, স্পর্শ, কথোপকথন চলত। উপহার বিনিময় সেরে চোখ মুছে আত্মীয়রা ফিরে যেতেন নিজেদের ঘরে। ঢাকায় জঙ্গিহানার পরে সীমান্তের সর্বত্র এখন চূড়ান্ত কড়াকড়ি। সে কারণেই এ বারের ইদে সীমান্ত পারের আত্মীয়স্বজন, পরিচিতদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হবে না। ইদের মুখে বিষাদ থাবা বসিয়েছে সীমান্তপারে। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকটুকুও এ বার বুজে গিয়েছে। ইদের চাঁদ ওঠার খুশির অপেক্ষাতেই শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি থেকে মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের গ্রামের মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করল আনন্দবাজার।ও পারের ভোরের আজানের সুরে ঘুম ভাঙে এ-পারের। অনুষ্ঠান-পরবে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক গলে চলে যায় ডালের বড়া, মুড়কি। বেড়ার ফাঁক দিয়েই ফিরে আসে গুড়, চালের পিঠে। বেড়ার এ-পারে নবগ্রাম, ও-পারে ইসালিপুর। বেড়ার এ পাশে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী ওপাশে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের জওয়ানেরা।

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০২:২৯

ও পারের আজানের সুর

ও পারের ভোরের আজানের সুরে ঘুম ভাঙে এ-পারের। অনুষ্ঠান-পরবে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক গলে চলে যায় ডালের বড়া, মুড়কি। বেড়ার ফাঁক দিয়েই ফিরে আসে গুড়, চালের পিঠে। বেড়ার এ-পারে নবগ্রাম, ও-পারে ইসালিপুর। বেড়ার এ পাশে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী ওপাশে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের জওয়ানেরা। কাঁটাতারের বেড়ার খুব কাছেই দুই গ্রাম। বছরের অনান্য সময়ে কড়াকড়ি থাকলে পুরো-পরবের সময় বিএসএফ এবং বিজিবি কোনও বাহিনীর জওয়ানেরাই তেমন বাধা দিত না বলে বাসিন্দাদের দাবি। দুই গ্রামের বাসিন্দারাই বেড়ার সামনে এসে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতেন, জিনিসপত্র, খাবার আদানপ্রদান চলত। ইদের আগের বিকেলে বেড়ার পাশ দিয়ে যাওয়া সরু পিচ রাস্তার প্রান্তে বসে ছিলেন হারুন মিয়াঁ। বেড়ার ও পারে তাঁর কিছু জমি রয়েছে। ভারতেরই জমি। সেখানে নিয়ম মেনে সময় ধরে চাষ-আবাদ করতে দেয় বিএসএফ। তিনি বললেন, ‘‘একটাই গ্রাম ছিল। দেশভাগে গ্রাম ভেঙে দু’টো হয়ে যায়। আত্মীয়স্বজনরা সবাই আলাদা হয়ে গেলাম। কিছু দিন আগে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হল। পাসপোর্ট-ভিসা নেই। তাই পরবের সময় বেড়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াতাম, ও পার থেকে আত্মীয়রা আসত।’’ হারুন মিয়াঁর ভাইয়ের বাড়ি বেড়ার ও পারে। এ বছর ভাইয়ের মেয়ের ঘরে নাতি হয়েছে। সে নাতির মুখ দেখার কথা ছিল ইদের দিন। হারুন মিয়াঁ বলেন, ‘‘কোথা থেকে কী হল, এবার নাকি কাউকে বেড়ার ধাঁরেকাছে ঘেঁষতে দেবে না। বাচ্চাটার জন্য জামা কিনেছিলাম, দেওয়া হবে না। মুখ দেখাও হবে না।’’ বেড়ার ও পারে থাকা হারুণ মিঞার জমিতে বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। জল জমেছে প্রৌঢ়ের চোখেও। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিবার ইদে ননদের জন্য শাড়ি কেনেন নাজিমা বানু। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ননদের হাতে শাড়ি উপহার দেন ছুঁড়ে। নাজিমা বানু বলেন, ‘‘আমরা হাত ধরে কথা বলি। কান্নাকাঁটিও করি। এ বার ঢাকার জঙ্গিরা সে সব বন্ধ করে দিল। এখন তো বেড়ার পাশে রাস্তাতেও দাঁড়াতে দিচ্ছে না বিএসএফ।’’ ফুলবাড়ি থেকে নবগ্রাম সীমান্ত চৌকি পর্যন্ত বেড়ার দু’পাশেই সার দিয়ে গ্রাম। কোনও গ্রাম বেড়ার খুব কাছে, কোনও গ্রাম আবার দূরে দূরে। ইদে বিনিময় হয় উপহার। দেওয়ালিতে বেড়ার কাঁটায় মোম গেঁথে আলো জ্বালায় বাসিন্দারা, যদিও এবারে ঢাকার জঙ্গিহানায় আঁধার নেমেছে সীমান্তের বাসিন্দাদের মনে।

উপহার ছোড়া নিষেধ

মিলনমেলার জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয় বছরে একদিন। দু’পারের বাসিন্দাদের ঢল নামে মেলার মাঠে। তবে ইদের দিন গেট না খুললেও, বাসিন্দাদের ভিড় হয় বেড়ার আশেপাশেই। জলপাইগুড়ি শহর থেকে কিছুটা দূরেই নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। টিয়াপাড়ার কাঁটাতারের বেড়ার ও পারেই মিলনমেলার মাঠ। সরকারি ভাবে মেলা না হলেও, ইদের দিন মেলার মাঠেও ভিড় জমে। এ বার থেকে ছুড়ে দেওয়া হয় বিস্কুট, চকোলেটের প্যাকেট ওপার থেকে উড়ে আসে প্রতি উপহার। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরের বাসিন্দা রতন রায়ের অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন বাংলাদেশের ডোমারে। ইদ বা অন্য উৎসব অনুষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের নিয়ে যান। ওপারে খবর দেওয়া থাকে। সবাই জড়ো হন। কাঁটাতারের বেড়ার দু’পাশে দাঁড়িয়ে একবার চোখের দেখা হয়। দেখা সাক্ষাতের সঙ্গে সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ছোড়াছুড়ি করে উপহার বিনিময়ও হয়। রতনবাবু বলেন, “আবার কবে সবার সঙ্গে দেখা হবে কে জানে। ওদের মুখগুলো মনে করে ভেবেই এখন দিন যাবে।” নগর বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের জমাদারপাড়ার পঞ্চায়েত সদস্য লতিফুর হকের পিসিরা বাঙলাদেশের বড়দরগাতে থাকেন। বুধবার লতিফুর বলেন, “আমরা সারা বছর এই দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। বছরে ওই একটা দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য দেখা হয়। এখন আর হবে না ভেবে খুবই খারাপ লাগছে।” ক্ষুদিপাড়ার আজিমুদ্দিন হকের দিদি এবং জামাইবাবু থাকেন ওপারের মোমিনপাড়ায়। দিদি জামাইবাবুর সঙ্গে তাঁর বছরে দু’বার দেখা হয়। এখন কী ভাবে আবার কবে দেখা হবে, সেই চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে আছেন। নগরবেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান প্রমীলা বর্মন, দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সারদা প্রসাদ দাস বলেন, “উত্তরবঙ্গ জুড়ে হাজার হাজার লোকের আত্মীয়স্বজনরা ওপারে আছেন। প্রতি বছর মিলনমেলা অথবা উৎসবের দিনে বেড়ার ফাঁক দিয়েই দেখা হয়। এ বার থেকে সেই ফাঁকটুকুও বুঝি বুজে যাবে!’’

আলোয় ভরবে উঠোন

এপারে ভারতভুক্ত হাড়িপুকুর। লাগোয়া ওপার বাংলার বাগমারা গ্রাম। মাঝখানে ফুট দেড়েকের ত্রিকোণ আকৃতির সীমান্ত পিলার ছাড়া দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের ওই দু’টি এলাকা মিলেমিশে একাকার। ওই দু’টি গ্রামের মূল রাস্তার ধারে বাগমারা এলাকার মধ্যে মসজিদটি ইদ উৎসবে সেজে উঠেছে। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত হাড়িপুকুরের বাসিন্দারাও তাই ইদের নমাজ পড়তে মাত্র দুই ধাপ দূরত্বের ওই মসজিদে সামিল হতে চলেছেন। হাড়িপুকুরের বাসিন্দা মজিবর মিঁয়ার কথায়, ‘‘ওরা মসজিদের জন্য জায়গা দিয়েছে। আমরা ইট দিয়ে সাহায্য করেছি। মসজিদের বৈদ্যুতিক আলোয় হাড়িপুকুরের রাস্তা ভরে ওঠে।’’ ওই এলাকা থেকে প্রায় দেড়শো গজ দূরত্বে কাঁটাতারের বেড়া। মূল হিলি বাজার, ব্লক কার্যালয় থেকে স্কুল, হাসপাতালে যাতায়াতের সময় বিএসএফের কড়া পাহারার মুখে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। এরপর গ্রামে ঢুকে গেলে সব একাকার। আত্মীয়তা থেকে বিয়ে, পরবে মিষ্টি উপহার দেওয়াও চলে। তাই আকাশে চাঁদ দেখার অপেক্ষায় বেড়াহীন হিলি সীমান্তের ভারত-বাংলাদেশভুক্ত ওই দুই এলাকার বাসিন্দারা। তবে হাড়িপুকুরের মতো খুশির ইদে আত্মীয় ও পড়শিদের সঙ্গে রমজান মাসের শেষে ‘চাঁদ মুবারক’ জানানোর উপায় দেখছেন না হিলি সীমান্তেরই উঁচু গোবিন্দপুরের বাসিন্দারা। সম্প্রতি ঢাকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় সীমান্তে কড়কড়ি বাড়ায় কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে এপার থেকে ওপারের আত্মীয়দের চোখের দেখা ও উপহার বিনিময়ের প্রতি বছরের ঐতিহ্যে এবারে ছেদ পড়তে চলেছে বলে হতাশ প্রবীণ আলি সাহেব। তিনি বলেন, ‘‘ইদের দিনে আত্মীয় ও পরিচিতের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টি দেওয়া নেওয়ার আশায় আমরা দিন গুণি। এ বারে বেড়ার গেট পেরিয়ে সদর রাস্তা ছাড়া অন্য পথে যাওয়ার উপর কড়াকড়ি হয়েছে।’’ হিলি সীমান্তের কাঁটাতারহীন ১৪টি এলাকা জুড়ে কড়া পাহারায় দুদেশের সীমান্ত রক্ষীরা। খুশির ইদে তাই অনেকের মুখভার।

গেট থাকছে বন্ধই

চাঁদ দেখবেন এক সঙ্গে। একই সময়ে পড়বেন নামাজও। কিন্তু নামাজের পর ইদের মিষ্টি আত্মীয় স্বজনদের মুখে তুলে দেওয়া যাবে না। সংশয়ে রয়েছেন মালদহের সীমান্তবর্তী এলাকার কাঁটাতার বেড়ার ওপারের বাসিন্দারা। রফিকুল মিঞা, গাজলু শেখেরা দাবি করলেন, আগে ইদের দিনে বিশেষ ছাড়পত্র দেওয়া হত। দিনভর খোলা থাকত কাঁটাতারের গেট। দিনভর আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে থেকে রাতে বাড়ি ফিরতেন রফিকুল, গাজলি শেখরা। মালদহ জেলায় মোট ১৭১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৮১ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্তে নদী-খালও রয়েছে। কালিয়াচকের মহব্বতপুর, দুইশত বিঘি, শ্মশানির সিংহপাড়া এবং বৈষ্ণবনগরের মিলক সুলতানপুর, দৌলতপুর ও হবিবপুর থানার তালডাঙা গ্রামের বহু পরিবার কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাস করেন। দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট সময় ওই গ্রাম গুলির বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য গেট খোলা হয়। সকাল ছটা থেকে আটটা, দুপুর ১০টা থেকে ১২টা এবং বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য গেট খোলা থাকে। এই সময়ের মধ্যে যাতায়াত করতে না পারলে বেড়ার এপারেই থাকতে হয় বাসিন্দাদের। পরের দিন ফেরার সময় সীমান্ত রক্ষীর বাহিনীর দীর্ঘ জেরার মুখে পড়তেও হয়। বাংলাদেশের গুলশনের ঘটনার পর আর কড়া হয়েছে সীমান্ত। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষ কোনও প্রয়োজন ছাড়া সীমান্তের গেটগুলি এখন খোলাই হচ্ছে না। সীমান্ত এলাকায় চলছে সাইকেল নিয়ে বিএসএফের টহলদারি। রাস্তায় পথ চলতি মানুষ দেখলেই চলছে দীর্ঘ জেরা ও তল্লাশি। এখন মনে পড়ে যাচ্ছে, উৎসবের সময় বিশেষ করে ইদের দিনে সর্ব ক্ষণের জন্য গেট খোলা থাকত। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়ির তৈরি সিমাই, মালপোয়া নিয়ে যাওয়া হত আত্মীয়দের বাড়িতে। আত্মীয়দের বাড়ি থেকেও আসত মণ্ডা মিঠাই সহ পোলাও মাংস। দিনভর হইহুল্লোড় করে দিন কাটত দিনের দিন বলে জানিয়েছে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য মোস্তাকিন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘তার কাঁটার বেড়া আমাদের রোজ নামচা বদলে দিয়েছে। শান্তিতে বসবাস করতে পারি না আমরা। তবে ইদের সময় বিশেষ ছাড়পত্র পাওয়া যেত। কিন্তু এবার সীমান্তে যা কড়াকড়ি করা হয়েছে তাতে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখাও হবে না। ইদের দিনই দরজা এঁটেই থাকতে হবে।’’

কড়াকড়ি ফাঁকা সীমান্তে

কোচবিহারের সীমান্ত এলাকা চ্যাংরাবান্ধার বাসিন্দা চৌরঙ্গী বাজার এলাকার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, “আমার মায়ের বয়স ৭০। বাংলাদেশের আওলিয়ার বাজারের বাসিন্দা মাসি জাবেদা বিবির বয়স প্রায় ৭৪। মাসিকে একবার নিজের চোখে দেখতে চাইছেন বৃদ্ধা মা। ইদের দিন সেটা হবে বলে আশায় ছিলাম। গুলশনের ঘটনায় পুরো পরিস্থিতিটাই বদলে গিয়েছে।” ঢাকার হামলার পরে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে রাতের নজরদারিতেও। ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করে কিছু এলাকায় নজর রাখতে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশও। কাঁটাতারের বেড়ার ধারে কাছে কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র বলেন, “উপহার হিসেবেও কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে যাতে কেউ কিছু ছুড়ে দিতে না পারেন দেখা হচ্ছে।”

Border village
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy