বিএসএফের নজরদারি চলছে।নিজস্ব চিত্র
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ফাঁসিদেওয়াতে গরু পাচারকে কেন্দ্র করে বিএসএফ এবং চোরাকারবারীদের গুলির লড়াইয়ে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পুলিশ এবং বিএসএফ সূত্রের খবর, গত তিন সপ্তাহে সীমান্তে ৩ দিন ভোর রাতে দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি জানুয়ারি মুড়িখাওয়া সীমান্তের দুষ্কৃতীদের গুলিতে এক বিএসএফ জওয়ান-সহ দু’জন গুলিবিদ্ধও হন। তার পরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি বানেশ্বরজোতে বিএসএফ জওয়ানেরা অন্ততপক্ষে ১২ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। দুষ্কৃতীরা ৬ রাউন্ডের মতো দেশি পিস্তল থেকে গুলি চালাতে চালাতে নদী পার হয়ে বাংলাদেশের দিকে পালায়। শেষ দু’বারে অবশ্য কেউ জখম হননি।
পুলিশ সূত্রের খবর, সীমান্তের ঘটনাস্থল থেকে বাংলাদেশি মোবাইল, টাকা উদ্ধার ছাড়াও দুষ্কৃতীদের আশ্রয়দাতা হিসাবে নাম উঠে আসে মাটিগাড়ার এক চিকিৎসকের। গত সপ্তাহে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। তার বিরুদ্ধে গুলিবিদ্ধ এক দুষ্কৃতীর চেম্বারে অস্ত্রোপচার করে গুলি বার করার পর তিন দিন আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে মহম্মদ আমিনুদ্দিন নামের ওই অভিযুক্তকে বিধাননগরের সাপটিগুড়ির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অবস্থায় বিএসএফ ও পুলিশ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়ে লাগোয়া গ্রামগুলিতে দুষ্কৃতীদের ঘাঁটি, আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করা শুরু হয়েছে। এই সীমান্ত সক্রিয় অন্তত ৫টি দলের পান্ডা হিসাবে বাংলা-বিহার সীমানায় ঘাঁটি গেড়ে থাকা এক ব্যক্তির নামও জানা গিয়েছে।
বিএসএফের উত্তরবঙ্গের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ডি হাওকিপ বলেন, ‘‘ধরপাকড়ের জেরে দুষ্কৃতীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহে একাধিকবার গুলি বিনিময় হয়েছে। কাঁটাতারহীন এলারায় আরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’ আর দার্জিলিঙের জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘ফাঁসিদেওয়া সীমান্তে পাচারকারীরা বরাবর সক্রিয়। দুষ্কৃতীদের গ্রামগুলিতে কিছু সহযোগী আছে। তাদের চিহ্নিত করা ধরা হচ্ছে। মাটিগাড়ার ওই চিকিৎসক তেমনই একজন।’’
পুলিশ ও বিএসএফ অফিসারেরা জানিয়েছেন, চোপড়া, সোনাপুর, পাঞ্জিপাড়া এবং বিহার থেকে মাস দু’য়েক আগেও ট্রাকে, পিকআপ ভ্যানে গরু সীমান্তের গ্রামগুলি আসছিল। পরে সুযোগ বুঝে তা পাচার হত। কিন্তু বিএসএফ, পুলিশ ও এসএসবির ধরপাকড়ে অন্তত ২৫০ গরু উদ্ধার হয়। ১০টি গাড়ি, দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল অস্ত্র উদ্ধার হয়। গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জন। বছর খানেক আগে গঙ্গারাম চা বাগান, সুদামগছ, ঠাকুরপাড়া, কান্তিভিটা বা রূপনদিঘীর মতো বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। এক দফায় মহানন্দা নদীর পার থেকে বিএসএফের ম্যানপ্যাক ছিনতাই হয়।
ফাঁসিদেওয়া ব্লকের লালদাস জোত থেকে মুড়িখাওয়া এলাকা অবধি ২২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। বিএসএফের লালদাস, বানেশ্বরজোত, ফাঁসিদেওয়া, কালামগছ এবং মুড়িখাওয়াতে সীমান্ত চৌকি রয়েছে। লালদাস থেকে ধনিয়ামোড় অবধি কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। কিন্তু বন্দরগছর অবধি প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার কোনও কাঁটাতার নেই। মহানন্দা নদী এবং এপারের গ্রামের জমির সমস্যার জন্য কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি। এর সুযোগকেই দুষ্কৃতীরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। বিশেষ করে বছরের বর্যার মরশুম এবং শীতকালে এই প্রবণতা বাড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy