ইংরেজবাজারের মহিলা কলেজ রোড, বিনয় সরকার রোড, নেতাজি মোড়-সহ দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন পুরবাজার, কার্নি মোড় মার্কেটে হাঁটু সমান জল জমে থাকায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে বৃষ্টির জলে ভাসছে সর্বমঙ্গলা পল্লি, মালঞ্চ পল্লি, ঝলঝলিয়া, সুভাষ পল্লি। ইংরেজবাজারের মতো পুরাতন মালদহের পুর বাজার, বাচামারি, শরৎ চন্দ্র পুরবাজার, ফুটানি মোড় প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। শুখা মরসুমে নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য পুর কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার দাবি জানানো হলেও কোন সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
আলিপুরদুয়ার
শহর থেকে গ্রাম। বন্যা পরিস্থিতি আলিপুরদুয়ার জুড়েই। শুক্রবার রাত থেকেই জল বাড়তে থাকে কালজানি, সঙ্কোশ, রায়ডাক, তোর্সা, ডিমা, বাসরা সহ ছোট বড় সমস্ত নদীর। গভীর রাতে জল ঢুকে যায় আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন বীরপাড়া এলাকায়। সারা রাত কালজানি ও ডিমা নদীর জল দেখে জেগে কাটিয়েছেন বাসিন্দারা। পরিস্থিতি নজরে রাখতে শুক্রবার সারা রাত কন্ট্রোল রুমে কাটিয়েছেন জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম-সহ জেলা আধিকারিকরা।
জয়ন্তীর জলে প্লাবিত হল শামুকতলার ছোট পুখুরিয়া গ্রাম। জলবন্দি চারশো বাসিন্দা শামুকতলার সিধু কানহু কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে ত্রাণ শিবির খুলেছে ব্লক প্রশাসন। কুমারগ্রামের ময়নাবাড়িতে তুরতুরি ঝোরার ঘোকসাবাঁধ ভেঙ্গে দশলিয়া, বাবুধারা, নয়াবস্তি, ময়নাবাড়ি রোড লাইন প্লাবিত হওয়ার ফলে ওই এলাকার তিনশো বাসিন্দা তুরতুরি চা বাগান প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। কুমারগ্রামের বারবিশা লাল স্কুল এলাকায় রায়ডাক নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। দ্রুত ফাটল মেরামতের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
শামুকতলা বাজার এলাকায় আবার সেচ দফতরের অপেক্ষায় না থেকে গ্রামবাসীরাই ঝাঁপিয়ে পড়লেন বাঁধের ফাটল মেরামতিতে। গ্রামবাসীদের তৎপরতায় বাঁধ মেরামত না হলে ধারসি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। গ্রামবাসীরা নিজেরাই বালির বস্তা দিয়ে ফাটল ভরাট করেন। যদিও পরে শামুকতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সেখানে আরও বালির বস্তা ফেলা হয়।
দু’দিন ধরে পাহাড় সমতলের বিরামহীন বৃষ্টিতে জলমগ্ন ফালাকাটা, ধূপগুড়ি ও মাদারিহাটের বহু এলাকা। ডুডুয়া, বিরকিটি নদীর জলোচ্ছ্বাসে ধূপগুড়ি ফালাকাটার মধ্যে জাতীয় সড়কে কোথাও হাঁটু জল। কোথাও কোমর জল। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর ওই সড়কে বন্ধ যানবাহন চলাচল। ধূপগুড়ির ভুটনিরঘাট এলাকায় সড়ক জলের নিচে। ফালাকাটা ব্লকের গুয়াবর নগর, দেওগাও গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামের পাঁচশোর উপর বাড়ি জলমগ্ন।
কোচবিহার
কোথাও জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে বাঁধ। কোথাও স্রোতে ভেসে গিয়েছেন মানুষ। জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে নদী। লাগাতার বৃষ্টিতে শনিবার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কোচবিহারে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের উপরে। সরকারি কোনও কর্তার দেখা না মেলায় ক্ষোভ বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে ফোন করে যাবতীয় খোঁজখবর নেন। তবে কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা জানান, ৫১৭টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। ৩৯৬ টি জায়গায় প্রশাসনের তরফে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা জেলায় একাধিক এলাকায় স্পিডবোট নামিয়ে মানুষদের উদ্ধার করা হয়েছে।
গত তিন দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীর জল বাড়তে শুরু করে। তোর্সার জলে ঘুঘুমারি, টাকাগছ, টাপুরহাট, পানিশালা, কালজানি নদীর জলে বলরামপুর, দেওচড়াই, কৃষ্ণপুর, মারুগঞ্জ থেকে শুরু করে রায়ডাক, মানসাঁই ধরলা নদীর জলেও আশেপাশের সমস্ত গ্রাম ডুবতে শুরু করে। শনিবার সকালে কলার ভেলায় নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার সময় কালজানি নদীতে ভেসে যায় সরেয়ার পাড়ের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ রায় (১৯)।
কোচবিহার শহর জুড়েও একই রকম জলছবি। শহরের ব্যস্ততম কেশব রোড থেকে স্টেশন রোড নদীর চেহারা নিয়েছে। সুনীতি রোড বাই লেন থেকে নতুন বাজার, কলাবাগান থেকে গাঁধীনগর শুধু জল আর জল। পরিস্থিতির জেরে কিছু এলাকায় বাসিন্দারা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। কল ডুবে যাওয়ায় শুরু হয়েছে পানীয় জলের সংকটও।শহরের রক্ষাকবচ বলে পরিচিত তোর্সার বাঁধ নিয়েও উদ্বেগ বেড়েছে। হাজরাপাড়া এলাকায় তোর্সার স্লুইস গেট চুঁইয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। বাসিন্দারা বালির বস্তা দিয়ে তা আটকাতে নামার পর সেচ দফতরের কর্মীরা আসেন। প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। উদ্বেগের ব্যাপার নেই।’’