আসর: মস্কোয় স্পার্টাক স্টেডিয়ামে, খেলা শুরুর আগে। নিজস্ব চিত্র
মে মাস থেকেই প্রবল উত্তেজনায় ছিলাম। রাশিয়া যাব, সামনে থেকে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখব ভেবে রাতে ঠিকমতো ঘুমই আসেনি অনেকদিন। মেখলা দেখার পাশাপাশি এতদিন শুধু গল্প, উপন্যাসে পড়া দেশ দেখারও লোভ ছিল। সময় আর রেস্ত মিলিয়ে বুঝতে পারি, গোটা তিনেকের বেশি ম্যাচ দেখার উপায় নেই। ঠিক হয়, উদ্বোধনী ম্যাচ ছাড়া আর দু’টি খেলা দেখব, পর্তুগাল-স্পেন এবং আর্জেন্তিনা-আইসল্যান্ড। ছোটবেলা থেকে আমি ব্রাজিলের কট্টর সমর্থক। তবুও এক যাত্রায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর লিওনেল মেসি-কে সামনে থেকে দেখার এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর কিবা হতে পারে।
শিলিগুড়িতে বাড়িতে বসে রাত জেগে চা, কফি খেয়ে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা অভ্যাস। এ বার কলকাতা থেকে দুবাই-র বিমানে বসা অবধি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে মস্কো যাচ্ছি। প্রথমদিন রাশিয়া, সৌদি আরবের খেলা মন কাড়েনি। আসলে মন পড়েছিল রোনাল্ডো আর মেসির ম্যাচের দিকেই। একদিন মস্কোতে থাকার পরে বুলেট ট্রেনে সোচিতে পৌঁছই। অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। হোটেলে উঠে গুছিয়ে নিয়েই মাঠমুখো হই। আসার আগে মস্কো থেকেই ‘ফ্যান আইডি’ তৈরি করতে হয়েছিল। পর্তুগাল-স্পেনের ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে রীতিমত দরদাম করে পর্তুগালের পতাকা কিনে গলায় জড়িয়েছিলাম। স্টেডিয়ামে ঢুকে খেলা দেখব কি, প্রথমে কিছুক্ষণ তো হাঁ করে লোক দেখছিলাম। আধঘণ্টার মধ্যে মাঠে নেমে পড়ল স্পেন, পর্তুগাল। শুরু করলাম রোনাল্ডোর হয়ে গলা ফাটানো। গোটা ম্যাচে একটা লোক একাই ১১ জনের বিরুদ্ধে খেলে গেল। গোটা স্টেডিয়ামের হাজার পঞ্চাশ লোক যেন উত্তেজনায় কাঁপছিল। স্টেডিয়ামে বসে ফ্রি-কিক থেকে রোনাল্ডোর গোল দেখেছি, যতবার ভাবছি গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
ওই ম্যাচ দেখেই মেসির টানে আবার ফিরেছি মস্কো। স্পারটাক স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে বাইরে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের গান, নাচ, উন্মাদনার সঙ্গে আমাদের দেশের ফুটবলপ্রেমীদের অদ্ভুত মিল। আমার তো ব্রাজিলের জার্সি গায়ে নাচানাচি করার অভ্যেস, তাই বিশেষ নাচতে পারলাম না। ব্রাজিল-নেমারকে মনের কোণে দাবিয়ে রেখে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসলাম।
আর্জেন্টিনার দল নামতেই চোখ খুঁজ়ছিল ‘ফুটবলের রাজপুত্রকে’। বারবার মাইকে বলছিল, প্রায় ৪৪ হাজার দর্শক মাঠ উপস্থিত। আইসল্যান্ডের বহু সমর্থক ছিল গ্যালারিতে। তবুও গোটা স্টেডিয়াম থেকে রব উঠছিল ‘মেসি-মেসি’। যখনই মেসির পায়ে বল এসেছে ততবার চেঁচিয়ে উঠেছে স্টেডিয়াম। মেসির গোল দেখতে পাইনি, সেটা খুবই খারাপ লাগছিল। যখন তাঁর পেনাল্টি মিস হল, মিনিট দু’য়েক যেন শ্মশানের নীরবতা ছিল স্টেডিয়ামে। ব্রাজিলের অন্ধ ভক্ত হয়েও বলছি, শুধুুমাত্র মেসির জন্যই আর্জেন্টিনার জয় চেয়েছিলাম। একজন গোল পেলেন, আরেকজন পেলেন না ঠিকই। কিন্তু খেলা তো আরও বাকি।
এতদিন বহু ডার্বি দেখেছি, ক্রিকেটের প্রচুর ম্যাচ দেখেছি, কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপের কাছে যেন সব ক্ষুদ্র। রেফারির খেলা শেষের বাঁশি বাজতেই মন খারাপ হয়ে গেল, আর খেলা দেখার নেই। যা দেখলাম তাকে সারা জীবনের স্মৃতি করে এ বার ফেরার পালা ঘরে। (লেখক: শিলিগুড়ির বাসিন্দা, আইনজীবী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy