‘দুর্ভাগ্য’ কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না জলদাপাড়া জঙ্গলের। পরপর পাঁচটি গন্ডারের মৃত্যুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বড়সড় অগ্নিকাণ্ডে উত্তরের ‘আমাজ়নে’র বিস্তীর্ণ এলাকার ঘাসবন পুড়ে ছাই। ফলে আবার বড়সড় ক্ষতি। আর্থিক বিচারে এই ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করেনি বন দফতর। তবে বনের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটা দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় বলে মনে করছেন বনকর্তা থেকে পরিবেশবিদেরা।
বন দফতরের দাবি, ওই অগ্নিকাণ্ডে বড় কোনও জন্তুর মৃত্যু হয়নি। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, “কর্মীদের তৎপরতায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বড় কোনও জীবজন্তুর মৃত্যু হয়নি। সাপের মত কোনও ছোট প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে কিনা সেগুলো দেখা হচ্ছে। রিপোর্ট পেলে তা স্পষ্ট যাবে।” কোচবিহারের ডিএফও কুমার বিমলও বলেছেন, “বড় কোনও জন্তুর মৃত্যু হয়নি।” কিন্তু বেসরকারি সূত্রের দাবি, ঘাসবন-নির্ভর কীটপতঙ্গ ও ছোট ছোট প্রাণীর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই। কারণ, এই ধরনের ঘাসবনে সাধারণত সাপ, খরগোশ, ময়ূর, কাছিম, হরিণ শাবকের মতো ছোট প্রাণী থাকে।
ঘটনার একদিন পরেও জঙ্গলে আগুন লাগার কারণ হিসেবে ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব্বেই অনড় বনকর্তারা। তবে শুকনো ঘাসবনে পরিকল্পিত ভাবে আগুন ধরানো হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও বন দফতরের অন্দরে কর্তাদের একাংশের মুখে ফিরছে। ওই অংশের যুক্তি, দ্রুত নতুন ঘাসের আশায় পোড়ানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সমস্ত কিছুই বনকর্তারা খতিয়ে দেখছেন। ওইদিন বনের ওই অংশে কেউ ঢুকেছিলেন ‘সূত্র’ মিলেছে বলেও দাবি দফতরের। রবিকান্ত বলেন, “লাগোয়া চা বাগান থেকে কোনও ব্যক্তি ঢুকে পড়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। যদিও কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।”
এ দিনও জঙ্গলে ‘বহিরাগত’দের অনুপ্রবেশ রুখতে নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বনকর্তারা। সেটা কতখানি কার্যকর করা সম্ভব, তা নিয়েই প্রশ্ন পরিবেশপ্রেমীদের। পরিবেশবিদ অনিমেষ বসু বলেন, “কর্মী সংখ্যার অপ্রতুলতা জঙ্গলে নজরদারির বড় সমস্যা। আগে শূন্যপদ পূরণ হোক। কর্মীর সংখ্যা কম থাকলে জঙ্গলে টহলদারির কাজে তো খামতি থাকবেই।” বন দফতর সূত্রের দাবি, সমস্ত শূন্যপদ পূরণের চেষ্টা হচ্ছে।
ঘাসবন পুড়ে যাওয়ায় জলদাপাড়ার গন্ডার, বাইসন, হরিণের মত তৃণভোজীদের খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। তাই ফাঁকা জায়গায় পরিকল্পিত ভাবে যাতে শুধু কাশের বন না হয়, সেজন্য পুরুন্ডি, ঢাড্ডার বীজ বপণের দাবিও উঠেছে পরিবেশপ্রেমীদের একাংশে। প্রধান মুখ্য বনপাল অবশ্য বলেন, “ ঘাস-জাতীয় গাছের গোড়া মাটির নীচে থাকেই। ঘাস হবে। অপেক্ষা শুধু বৃষ্টির।” ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে