রোহিত মাইবামের (বাঁ দিকে) সঙ্গে রেনেডি সিংহ।
কচিকাঁচাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য শিবির খুলেছিলেন জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার, এফ সি পুনে সিটি দলের সহকারী কোচ রেনেডি সিংহ। বাচ্চাদের সামলানো আর ফুটবলের প্রাথমিক পাঠ দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন উঠতি ফুটবলার রোহিত মাইবামের উপরে। কিন্তু শিবির শেষ হওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রোহিত। ধরা পড়ে ক্যান্সার। তাঁর পরিবারের মতোই ভেঙে পড়েন রেনেডিও। কিন্তু সেখান থেকেই ফের যুদ্ধ শুরু দু’জনের। একজন বাঁচতে চান। অন্য জন বাঁচাতে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য রোহিতের দরকার অনেক টাকার। দরিদ্র পরিবারে তার জোগান কই? রেনেডিরও ভরসা বলতে ফুটবলই। শেষ পর্যন্ত মণিপুরবাসীর কাছে আবেদন রেখে রোহিতের জন্য প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন রেনেডি। সেখান থেকেই উঠে আসে আড়াই লক্ষ টাকা।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, জেসিটি, চিরাগ, এভারেডি দলে খেলার পাশাপাশি ভারতের জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ফুটবলার ছিলেন রেনেডি। নিজের রাজ্য মণিপুরে প্রায় প্রবাদপ্রতিম রেনেডি। মণিপুরের উঠতি ফুটবলারদের সামনে আর্দশ। ছোটবেলা থেকে ফুটবল পাগল রোহিত মাইবামের আইডল ছিলেন রেনেডি। কখনও ভাবেননি রেনেডির সঙ্গে খেলতে পারবেন। কিন্তু থৌবাল জেলার টেনথায় ছোটদের জন্য ফুটবল শিবির করছেন রেনেডি, এই খবর পেয়েই সেখানে হাজির হন স্থানীয় ক্লাবের সেরা ফুটবলার রোহিত। ২৫ জন কিশোর ফুটবলারকে ফুটবলের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কিল শেখাতেন রোহিত। প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন রেনেডিরও। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, তিনিও রেনেডির মতোই একদিন কলকাতা ময়দানে পা রাখবেন। কিন্তু শিবির শেষ হতেই অসুস্থতা ধরা পড়ে। জানা যায় মারণ রোগের কথা।
খবর পেয়ে হতবাক রেনেডিও। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিভাবান, স্কিল থাকা চমৎকার ফুটবলার রোহিতের সামনে দারুণ ভবিষ্যৎ ছিল। একবার ভেবেছিলাম সব শেষ। পরে ভাবলাম, এমন তো অনেকের সঙ্গেই হচ্ছে। তাঁরা লড়ে ফিরেও আসছেন। আমরাও হার মানব না। বোঝালাম রোহিতকে।’’
কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিস্তর টাকা দরকার ছিল। রিমস থেকে কেমোথেরাপি নেওয়া দুর্বল রোহিত ও তার পরিবার সেই চিন্তায় আরও ভেঙে পড়ে। বাবা-মায়ের ৯ মেয়ের পাশাপাশি একমাত্র পুত্র রোহিত। রেনেডি ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে খেলা মণিপুরি ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগ করেন স্থানীয় চিত্রজগতের সঙ্গেও। রেনেডির উদ্যোগেই রেনেডি একাদশ বনাম প্রিমিয়ার লিগের একমাত্র মণিপুরি দল নেরোকা একাদশের মধ্যে প্রদর্শনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। নিজের চেষ্টায় সব ব্যবস্থা করেন রেনেডি। এক খেলা থেকেই উঠে আসে আড়াই লক্ষ টাকা। রোহিত নিজেও হাজির ছিলেন দর্শকাসনে। গত কাল রোহিতের বাড়ি গিয়ে তাঁর হাতে ওই টাকা তুলে দেন রেনেডি। রোহিতের কথায়, ‘‘শুধু আমার নয়, মণিপুরবাসীরও স্বপ্ন পূরণ করলেন রেনেডিদা। তাঁর জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন সব মণিপুরি ফুটবলার একই সঙ্গে মাঠে নামলেন। আর উপলক্ষ কি না আমি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy