Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শ্মশান পেরোলেই ভুলে যান সবাই

খাতায় কলমে রবি ও পবন জলপাইগুড়ি পুরসভার অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী৷ মাসকালাইবাড়ি শ্মশানে যাওয়া মৃতদেহ সৎকারের খুটিনাটি তাদেরকেই সামলাতে হয়৷ সে জন্য শ্মশানের এক কোনেই তাদের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে৷

অভিমানী: পবন ও রবি। নিজস্ব চিত্র

অভিমানী: পবন ও রবি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ১০:৪০
Share: Save:

শ্মশানে আর যেতে চান না রবি ও পবন পাসোয়ান। তাঁদের অভিমানের পাশে দাঁড়িয়েছে জলপাইগুড়ি শহরও।

মৃতদেহ নামানো থেকে থেকে শুরু করে, দেহকে বৈদ্যুতিন চুল্লির ভিতরে নিয়ে যাওয়া কিংবা সবশেষে সেখান থেকে চিতাভস্ম বের করা৷ জলপাইগুড়ির মাশকালাই বাড়ি শ্মশানে বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন দুই ভাই—রবি ও পবন পাসোয়ান৷ কিন্তু তিন প্রজন্ম থেকে করে আসা সেই কাজই এ বার ছাড়তে চাইছেন তাঁরা৷

খাতায় কলমে রবি ও পবন জলপাইগুড়ি পুরসভার অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী৷ মাসকালাইবাড়ি শ্মশানে যাওয়া মৃতদেহ সৎকারের খুটিনাটি তাদেরকেই সামলাতে হয়৷ সে জন্য শ্মশানের এক কোনেই তাদের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু অনিয়মিত বেতন ও বাসস্থানের ভগ্নদশার ফলেই এই কাজে আর উৎসাহ পাচ্ছেন না দুই ভাইয়ের একজনও৷

রবির কথায়, ‘‘তিন প্রজন্ম ধরে আমরা এই কাজ করে আসছি৷ বাড়িতে আমার পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে ছাড়াও মা রয়েছেন৷ মেয়েদের পড়াশোনায় অনেক খরচ৷ অথচ, আজও আমার চাকরিটা স্থায়ী হল না৷ সপ্তাহে সাত দিন কাজ করতে হলেও, হাজিরা মেলে ছয় দিনের৷ প্রতি দিন মাত্র ১২০ টাকা করে৷ তাও সেটা নিয়মিত পাই না৷’’ রবির অভিযোগ, এক মাসের বেতন পেতে কখনও কখনও তিন-চার মাসও অপেক্ষা করতে হয়৷ এ ভাবে আর চলা যায় না—মন্তব্য তাঁর৷

রবির ভাই পবনের কথায়, ‘‘আমাদের কাজে দিন রাতের কোন ব্যাপার নেই৷ যখন তখন শ্মশানে দেহ আসতেই পারে৷ সে জন্য শ্মশানের এক কোণে আমাদের থাকার ব্যবস্থা৷ অথচ, টিনের চাল ও টিনের বেড়ার ঘরগুলির দীর্ঘ দিন থেকেই ভগ্নদশা হলেও তা মেরামত হয়না৷ পুরসভাকে বারবার বলেও কোন কাজ হয় না৷’’

এই পাসোয়ান পরিবার সূত্রেরই খবর, মাশকালাইবাড়ি শ্মশানে প্রথম মৃতদেহ সৎকারের এই কাজটি শুরু করেছিলেন রবি ও পবনের ঠাকুরদা৷ তারপর তাঁদের বাবা৷ এবং বাবার থেকে দুই ছেলে৷ দুই ভাইয়ের কথায়, ‘‘আমাদের যা হাল৷ তা দেখে হয়তো আর পরের প্রজন্ম এই কাজে উৎসাহিত হবে না৷’’ তাঁদের কথায়, শ্মশানে মৃতদেহ নিয়ে তাদের পরিজনরা আসেন৷ সেই পরিজনের তালিকায় কত নেতা-সরকারি আমলারাও আসেন৷ তাদেরকেও অনেক বলেছেন৷ কিন্তু শ্মশান থেকে বেরিয়ে গেলেই সবাই যেন তাঁদের কথা ভুলে যান৷ দুই ভাইয়ের কথায়, ‘‘প্রচণ্ড নিষ্ঠা সহকারে কাজটা করি৷ কিন্তু আর হয় তো টানতে পারবো না৷’’

যদিও শ্মশানে কর্মরত অস্থায়ী কর্মী এই দুই ভাইয়ের সমস্যার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু৷ তাঁর কথায়, ‘‘ওই দুজন যে এত সমস্যায় তা আমায় তো কখনও বলেননি৷ অবশ্য তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা শুনব৷ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Funeral Cremation শ্মশান
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE