খেলায় পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও অংশগ্রহণ করেন। নিজস্ব চিত্র।
মালদহের এমন এক জায়গা আছে, যেখানে প্রতি বছর কিছু দিনের জন্য জুয়া খেলা অপরাধ বলে গণ্য হয় না। বরং তাকে ধরা হয়ে থাকে স্থানীয় প্রাচীন লোকাচার বলে।
এই অদ্ভুত মেলা বসে মালদহ জেলার অন্যতম শহর পুরাতন মালদহের মোকাতিপুরে। মূলাষষ্ঠী তিথিতে। যে খেলায় পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও অংশগ্রহণ করেন।
কথিত, ‘মনসামঙ্গল কাব্য’ অনুযায়ী পুরাতন মালদহের এই অঞ্চলের নদী দিয়ে স্বামী লখিন্দরের দেহ ভেলায় নিয়ে ভেসে গিয়েছিলেন বেহুলা। সেই সময় এক জুয়াড়ি জুয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে মোকাতিপুরে নদীর ধারে বসে কাঁদছিলেন। ওই জুয়াড়িকে দেখে বেহুলা জানতে পারেন তিনি নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছেন।
আরও পড়ুন: চাঁচলে ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’র মঞ্চেই বিজেপি-র প্রায় ১০০ কর্মী যোগ দিলেন তৃণমূলে
তখন বেহুলা তাঁকে হতাশ হতে নিষেধ করেন এবং তাঁর হাতের সোনার চুড়ি দিয়ে বলেন যে এই চুড়ি দিয়ে জুয়া খেললে তিনি তাঁর হারানো সব কিছু আবার ফিরে পাবেন। পরে বেহুলার কথা সত্যি বলে প্রমাণিত হয়।
বলা হয়, মঙ্গলকাব্যের যুগ থেকে এই মেলা আজও সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এই মেলায় মহিলারা মা ষষ্ঠীর পুজো দেওয়ার পরে জুয়া খেলেন তারপর বাড়ি ফেরেন।
এই মেলায় জুয়া খেলাকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে গণ্য করা হয়। এখানে ফুচকা-জিলিপি-পাঁপড়ভাজার দোকানের পাশাপাশি জুয়ার আসর ছড়িয়ে থাকে। পরিবারের প্রবীণ ও নবীন, সকল প্রজন্মের সদস্য একই বোর্ডে জুয়া খেলেন৷
আরও পড়ুন: প্রণবের স্মৃতি জড়ানো স্কুলের মাঠ দখলমুক্ত করল চাঁচল প্রশাসন
সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলা চলে রাতভর৷ এই জুয়া খেলায় কোনও পুলিশি নিষেধাজ্ঞা নেই৷ পুরাতন মালদহের বাসিন্দারা এই মেলার সাক্ষী কয়েক প্রজন্ম ধরে৷ মেলা ফুরিয়ে গেলে অবশ্য আইন মেনেই জুয়া খেলা আবার দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয় এই অঞ্চলে।
করোনার জন্য এ বার মেলার সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বিকেল ৪টে পর্যন্তই মেলা চলবে৷ সকালে শুরু হয় ষষ্ঠীপুজো৷ পুজো শেষ হতে না হতেই বসে জুয়াখেলার আসর৷ শুধু মালদহ কিংবা রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকেই নয়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমনকি অসম থেকেও অনেকে এই মেলায় আসেন জুয়া খেলতে। লোকাচার হলেও জুয়াখেলা ঘিরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য থাকে কড়া পুলিশি পাহারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy