Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রণক্ষেত্র মারুগঞ্জ, জখম ১৩

মঙ্গলবার সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর নিজেরই বিধানসভা কেন্দ্রের যে তৃণমূল কার্যালয়গুলো ‘দখল’ হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ, সেগুলো পুনরুদ্ধারে গিয়েছিলেন।

মারুগঞ্জে উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করল পুলিশের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

মারুগঞ্জে উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করল পুলিশের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০৬:০০
Share: Save:

পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠল তুফানগঞ্জ মহকুমার মারুগঞ্জ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় জনতার। তা সামলাতে বড় বাহিনী এলে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জখম হয়েছেন ১৩ জন পুলিশকর্মীও।

মঙ্গলবার সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর নিজেরই বিধানসভা কেন্দ্রের যে তৃণমূল কার্যালয়গুলো ‘দখল’ হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ, সেগুলো পুনরুদ্ধারে গিয়েছিলেন। মারুগঞ্জ এলাকায় রবীন্দ্রনাথের গাড়ি আসতেই স্থানীয়রা তাকে কালো পতাকা দেখায় বলে অভিযোগ। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, এরপরেই রবীন্দ্রনাথ গাড়ি থেকে নেমে বিজেপির কার্যালয়ে গিয়ে হুমকি দেন। অভিযোগ, তার পরে তাঁর দেহরক্ষী এবং সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে জওয়ানেরা ছিলেন, তাঁদের লাঠি চালাতে বলেন রবিবাবু। কিছু সময়ের জন্য বিজেপি কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি এই ঘটনার পরে মারুগঞ্জ ৩১ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বসে স্থানীয় বাসিন্দারা। অবরোধ তুলতে ঘটনাস্থলে আসে তুফানগঞ্জ থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী। বিক্ষোভের মুখে পড়ে তুফানগঞ্জ পুলিশের গাড়ি। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে বিজেপির অভিযোগ ফের পুলিশ লাঠিচার্জ করে। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং আহত হন ১৩ জন পুলিশকর্মী। তুফানগঞ্জ থেকে আরও পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে মারুগঞ্জ এলাকা রয়েছে থমথমে। আহত পুলিশকর্মীদের তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিজেপির ট্রেড ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সত্যজিৎ রায় ঘটনাস্থল থেকে বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবু মারুগঞ্জ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও ব্যক্তি তাঁকে কালো পতাকা দেখালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ করান। পরবর্তীতে তিনি চলে যান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গ্রামবাসীরা মারুগঞ্জ পথ অবরোধ বসে। তুফানগঞ্জ থানা পুলিশ এসে ফের লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের ওপর। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।’’

রবীন্দ্রনাথবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘আমি মারুগঞ্জ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার গাড়ি লক্ষ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল সিপিএম এবং বিজেপির গুন্ডারা। চিৎকার চেঁচামেচি করছিল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল। পরে আমি ওই এলাকা থেকে চলে গিয়ে আমার কাজে যাই। তারপর জানতে পেরেছি বিজেপি ও সিপিএমের গুন্ডারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। মহিলা পুলিশ কর্মী সহ ১৭ জন এই ঘটনায় আহত হয় বলে তিনি জানান।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে থাকা কোনও পুলিশ লাঠি চালাননি। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করছে বিজেপি।’’

কোচবিহার বিজেপির জেলা সভাপতি মালতী রাভা বলেন, ‘‘এলাকায় বিশৃঙ্খলার জন্য তৃণমূলের বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে বোমা অস্ত্র মজুদ রাখা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সোমবার বক্সিরহাট তৃণমূলের কার্যালয় থেকে বোমা উদ্ধার হয়। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবুই আমাদের কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশকে লাঠিচার্জ করার নির্দেশ দেন। স্থানীয়রা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারুগঞ্জে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে আবার পুলিশ এসে স্থানীয়দের উপরে লাঠিচার্জ করে।’’

তুফানগঞ্জ মহকুমার এসডিপিও জ্যাম ইয়াং জিম্বা জানান, মারুগঞ্জের ঘটনায় লাঠি চালানো হয়নি। বিক্ষোভকারীদের শুধু সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরা আমাদের ১৩ জন কর্মীকে জখম করে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE