টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে চলল ঘেরাও বিক্ষোভ। তারপরে রবিবার তৃণমূলের জেলা নেতারা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপাচার্য গোপাল মিশ্রের সঙ্গে মিনিট দশেকের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরেই সব বিবাদ শেষ। কেঁদে ফেললেন উপাচার্য। স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগের যে ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ঘেরাও করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের চোখেও জল। কেউ আবার রুমাল দিয়ে উপাচার্যের চোখ মুছিয়ে দিলেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে নড়েননি। ওই ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য ছিল, প্রায় আশি শতাংশ পড়ুয়ার খাতা ভাল করে দেখা হয়নি।
গড়ে নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি ছিল, নম্বর বাড়াতে হবে। সেই দাবিতে তাঁরা প্রথমে ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক সনাতন দাসকে ২৮ ঘণ্টা ঘেরাও করেন। তখনই সনাতনবাবু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, খাতাগুলির পুনর্মূল্যায়ন হবে, তার জন্য কোনও ফি-ও লাগবে না। তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে শুক্রবার উপাচার্যকেই ঘেরাও করা হয়। দাবি করা হয় নম্বর বাড়াতেই হবে। গোপালবাবু তাতে রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, পুনর্মূল্যায়নে যা হবে, তাই হবে। তারপরেই শুরু হয় তাঁর ঘর ঘিরে বিক্ষোভ অবস্থান।
গোপালবাবু বাড়িতে যেতে পারেননি। তবে ঘরেই খাওয়াদাওয়া করেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সনাতনবাবু সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্তাও। তাঁরা বিরিয়ানি যেমন খেয়েছেন, ভাত-ডালও খেয়েছেন। বাইরে থেকে লেপ তোষক নিয়ে এসে তাঁদের শোওয়ার ব্যবস্থা করা হয় রাতে। টেবিল জোড়া দিয়ে ঘুমিয়েছেন সনাতনবাবুরা।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি, বিধায়ক নিহাররঞ্জন ঘোষ সহ একাধিক নেতা নেত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার পরে তাঁরা চলে যান উপাচার্যের ঘরে। মিনিট দশকেই শেষ হয়ে যায় আলোচনা। উপাচার্য বলেন, ‘‘ছাত্রদের সঙ্গে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে তাঁদের খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ছাত্ররা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’’ তবে আন্দোলন উঠতে কেন এত ঘণ্টা লেগে গেল? উপাচার্য বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তারপরই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।’’
আন্দোলন তুলে নেওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান তাঁরা নষ্ট হতে দেবেন না। সে কথা শুনেই কেঁদে ফেলেন উপাচার্য।
আন্দোলনকারীরা জানান, উপাচার্যের কাছ থেকে জোরালো প্রতিশ্রুতি পেয়েই তাঁরা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। উপাচার্যও একই দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক নেতাকে ডাকিনি। মালদহের মানুষ হিসেবে তাঁরা এখানে এসেছেন।’’
জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম নুরের যদিও দাবি, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে মুখে বললেও তৃণমূলের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় কব্জা করার চেষ্টা করছেন। মৌসমের বক্তব্য, ‘‘পুরোটাই নাটক। প্রথমে আন্দোলনকারীদের উস্কে দিয়ে পরে নিজেরা গিয়ে বিক্ষোভ তুলে নিতে বললেন তৃণমূলের নেতারা। তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।’’
মোয়াজ্জেম অবশ্য বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে পুরো বিষয়টি জানানোর পরই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। জেলার মানুষ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে রাজনীতির কোনও গন্ধ নেই।’’