Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকার বিয়ে নিয়ে সরব হয়ে আক্রান্ত ছাত্রী

বৌভাতের অনুষ্ঠানে এসে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিউটি খাতুনের মনে হয়, নতুন বউ তারই বয়সী। নাবালিকা বিয়ে যে বেআইনি, তখনই সে কথা জোর গলায় বলে ওঠে সে। অভিযোগ, তাকে থামাতে এর পরে বিউটির উপরে চড়াও হয় মোড়লের পরিবারের লোকেরা। বেধড়ক মার খেয়ে বিউটি এখন হাসপাতালে ভর্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

বৌভাতের অনুষ্ঠানে এসে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিউটি খাতুনের মনে হয়, নতুন বউ তারই বয়সী। নাবালিকা বিয়ে যে বেআইনি, তখনই সে কথা জোর গলায় বলে ওঠে সে। অভিযোগ, তাকে থামাতে এর পরে বিউটির উপরে চড়াও হয় মোড়লের পরিবারের লোকেরা। বেধড়ক মার খেয়ে বিউটি এখন হাসপাতালে ভর্তি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে ইংরেজবাজার থানার নাদাবপাড়া গ্রামে। এই ঘটনায় ওই গ্রামের মোড়ল-সহ মোট ছ’জনের নামে মহিলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বিউটির পরিবার। তাঁদের নামে আবার থানায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন অভিযুক্ত মোড়লের পরিবার। দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অমৃতি পঞ্চায়েতের নাদাবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় সব্জি বিক্রেতা আকালু শেখের ছেলে সুজলের বৌভাত ছিল মঙ্গলবারে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আকালুর আত্মীয় গ্রামের মোড়ল পাঁচু শেখও। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরের এক মেয়ের সঙ্গে রবিবার বিয়ে হয় সুজলের। বৌভাতের অনুষ্ঠানে এসে স্থানীয় নিবেদিতা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিউটির সন্দেহ হয়, পাত্রীটি নাবালিকা। এই অভিযোগ তুলেই সে বলতে থাকে, এ ভাবে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যায় না।

বিউটির বাড়ির লোকেদের দাবি, বিউটির কথায় অস্বস্তিতে পড়ে যান মোড়ল পাঁচু শেখ। তাঁদের অভিযোগ, প্রথমে পাঁচু তাকে গালিগালাজ করে থামতে বলেন। পরে বিউটিকে মারধর করতে তিনি নিজের ছেলেদের নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ। ছাত্রীর পরিবারের লোকেরা বাঁচাতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বিউটির কথায়, ‘‘বৌভাতে গিয়ে দেখি পাত্রীর বয়স আমারই মতো। তখন বললাম, পুলিশ জানতে পারলে সকলকে ধরে নিয়ে যাবে। বলা মাত্রই আমাকে সকলে মিলে মারধর শুরু করে দেয়।’’ পেশায় সব্জি বিক্রেতা বিউটির বাবা মকবুল শেখ এবং মা মর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিতে নেই বলে গ্রামে গ্রামে সরকারের তরফে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ মোড়ল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নাবালক-নাবালিকাদের বিয়ে দিচ্ছেন!’’ অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টে বিউটির পরিবারকেই গোলমাল বাধানোর জন্য দায়ী করছেন পাঁচু। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে। আসলে বিয়েতে ওই পরিবারকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তারা সমাজকে গালি দিচ্ছিল। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টে আমাদের উপরে হামলা চালায়।’’

ইংরেজবাজারের বিডিও দেবর্ষি মুখোপাধ্যায় জানান, আকালুর কাছে ছেলে এবং ছেলের বউয়ের বয়সের প্রমাণপত্র চাওয়া হয়েছে। তা যাচাই করে এই বিয়ের ব্যাপারে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আকালুর অবশ্য দাবি, দু’জনেরই বয়স আঠারো পেরিয়েছে। নবদম্পতিকে এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছে, তারা বুনিয়াদপুরে ঘুরতে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE