Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দশম, তবু উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তা

নন্দিতা বলেন, ‘‘আমি পরিক্ষা দিয়ে আশা করেছিলাম ভাল নম্বর পাব। কিন্তু রাজ্যের মেধা তালিকায় থাকব এতটা ভাবিনি কখনও। আমি বাবা মা-কে দেখেছি খুব কষ্ট করে আমাদের পড়াতে। আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’’

কৃতী: মা ও দিদির সঙ্গে নন্দিতা (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র

কৃতী: মা ও দিদির সঙ্গে নন্দিতা (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র

দীপেন রায়
মাথাভাঙা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০২:২৩
Share: Save:

শুধু বিঘে দুই আছে মোর ভুঁই, বাকি সব গেছে মেয়েদের পড়াশোনাতে। না এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ‘দুই বিঘে জমি’-র উপেনে মুখের বুলি না। এরকমটা বলছেন এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় দশম স্থান পাওয়া নন্দিতা বর্মনের বাবা নারায়ণচন্দ্র বর্মন। দুই বিঘে জমির ফসলে সংসার চালানোই কঠিন। তার উপরে চার চারটি মেয়ের পড়াশোনার খরচ। তার মধ্যেই নন্দিতার বড় তিন দিদি বিএ পাশ করেছেন। কিন্তু তারপরে তাঁদের পড়াশোনায় ছেদ পড়েছে। নন্দিতা চান পড়াশোনা শেষ করে ইংরেজির অধ্যাপক হতে।

নন্দিতা বলেন, ‘‘আমি পরিক্ষা দিয়ে আশা করেছিলাম ভাল নম্বর পাব। কিন্তু রাজ্যের মেধা তালিকায় থাকব এতটা ভাবিনি কখনও। আমি বাবা মা-কে দেখেছি খুব কষ্ট করে আমাদের পড়াতে। আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের খুব সাহায্য করতেন। এর সঙ্গে আমার গৃহশিক্ষকরাও সব সময় পাশে ছিলেন। তাঁরা টিউশনের টাকাও নিতেন না।’’

নারায়ণবাবু যেমন খুশি, তেমনই উদ্বিগ্ন। বলেন, ‘‘মেয়ে রাজ্যের মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ায় আমি আপ্লুত। মেয়েদের পড়াশোনার খরচ সামলাতে সংসারের কিছু করতে পারিনি। শুধু দুই বিঘে জমি রয়েছে বর্তমানে। তার উপর নির্ভর করে সংসার চলে না। বড় মেয়েদের লেখা পড়া মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’ বলতে বলতে বিমলবাবুর গলার স্বর আটকে যায়। আবার বলতে শুরু করেন, ‘‘কী করে উচ্চ শিক্ষা করাবো, সেটা ভাবতেই পারছি না। নিজের জমিতে ফসল উৎপন্ন ছাড়াও এদিক সেদিক শ্রমিক হিসাবে কাজ করে যা আয় হয়, তাতে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়ে যাই।’’

মা সুশীলা বলেন, ‘‘পরপর তিন মেয়ের পর নন্দিতার হওয়ায় অনেক কথা শুনতে হয়ে মানুষের কাছে। আমি আড়ালে আবডালে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বুকে আগলে রেখে মানুষ করেছি নন্দিতাকে।’’ বলতে বলতে সবিতাদেবী কেঁদে ফেলছিলেন। আঁচল দিয়ে মুছে নিয়ে বললেন, ‘‘আজ প্রচুর মানুষ শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এর থেকে আমার আর পাওনা নেই। আমরা খুবই খুশি।’’ নন্দিতার সাফল্যে পাড়াপড়শি থেকে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা খুশি। প্রধানশিক্ষক নলিনীরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘রাজ্যের মেধাতালিকায় জায়গা পেয়ে স্কুলকে গর্বিত করল।’’

অন্য দিকে, দারিদ্রর সঙ্গে লড়াই করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করার খবর পেয়ে যোগাযোগ করেন কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘মনের জোর ও জেদ থাকলে প্রতিকূলতাকেও হার মানিয়ে পড়াশোনা করা যায়, সেটা নন্দিতাকে না দেখলে বোঝা যেত না। ওকে দেখে সকল স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবে। আমরা সব সময় নন্দিতার পাশে থাকব। যাতে ওর উচ্চ শিক্ষায় কোনও বাধা না আসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE