Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তা নিজের হাতেই, তাইকোন্ডো শিখছে ছাত্রীরা

টিউশন, আঁকার ক্লাস, গানের স্কুল রয়েছে, সঙ্গে আছে সপ্তাহে দু’দিন তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ। সপ্তম শ্রেণির মধুশ্রী সপ্তাহে বুধবার এবং শনিবার বাবার সঙ্গে মাঠে যায়।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৮:১৯
পান্ডাপাড়ায় চলছে মেয়েদের তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ। — নিজস্ব চিত্র

পান্ডাপাড়ায় চলছে মেয়েদের তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ। — নিজস্ব চিত্র

টিউশন, আঁকার ক্লাস, গানের স্কুল রয়েছে, সঙ্গে আছে সপ্তাহে দু’দিন তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ। সপ্তম শ্রেণির মধুশ্রী সপ্তাহে বুধবার এবং শনিবার বাবার সঙ্গে মাঠে যায়। ঘণ্টাদুয়েক তাইকোন্ডোর মারপ্যাঁচ শেখে। মধুশ্রীর বাবা নীলাম্বর ঝা সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘দিনকাল ভাল না। পড়াশোনা, আঁকা-গানের সঙ্গে মেয়েদের তাইকোন্ডো শেখাও এখন আবশ্যিক।’’

‘দিনকাল’ ভাল না বলে মেয়েদের তাইকোন্ডো শেখাতে পাঠিয়েছেন মাধবী ঘোষ, গীতা রায়েরাও। জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার পুজোর মাঠে সপ্তাহে তিনদিন বিকেলে কচিকাঁচাদের ‘হো-হা’ কলরব শোনা যাচ্ছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কুল ছাত্রীদের তাইকেন্ডো শেখানোর প্রকল্প নিয়েছে। প্রথম কয়েক মাস ছাত্রীদের থেকে কোনও প্রশিক্ষণ ফি নিচ্ছে না সংগঠন। তারপর থেকে মাসে পঞ্চাশ টাকা করে ফি নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। দুঃস্থ পরিবারের ছাত্রীদের থেকে ফি নেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে।

কেন এই প্রকল্প?

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা ছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় জানা যায়, অভিভাবকদের অধিকাংশই মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত যে ছাত্রীরা টিউশনে যায়, বা দূরবর্তী স্কুল থেকে একা বাড়ি ফেরে তাদের অভিভাবকদের উদ্বেগের মাত্রা বেশি। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের সিংহভাগই মেয়েদের হাতে মোবাইল দিয়েছেন, যাতে জরুরি পরিস্থিতি পরিচিতদের ফোন করা সম্ভব হয়। যদিও, সংগঠনটি মনে করে, ছাত্রীদের যদি তাইকোন্ডোর প্যাঁচ-পয়জার জানা থাকে তবে নিজেদের প্রাথমিক সুরক্ষা নিজেরাই করতে পারবে। সে কারণেই প্রশিক্ষণ শিবিবের পরিকল্পনা বলে দাবি করলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক সন্দীপ্ত বসু মজুমদার।

মাঠের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মাধবী ঘোষ। সপ্তম শ্রেণির পিউয়ের কলাকৌশল মোবাইল ক্যামেরায় তুলেও রাখলেন। তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণের কথা শুনেই মেয়েকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দফতরে যোগাযোগ করেছিলেন। মোহন্তপাড়ার বাসিন্দা মাধবীদেবী বললেন, ‘‘চারপাশে যা শুনি, তাতে মেয়েকে একা একা বাড়ি থেকে ছাড়তেই বুক দুরুদুরু করে। কোনওদিন মেয়ের ফিরতে দেরি হলে, মনে নানা আশঙ্কা উঁকি দেয়। তবে তাইকেন্ডো শেখা থাকলে অন্তত বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে, এটাই ভরসা।’’ ষষ্ঠ শ্রেণির তানিয়া-ই স্কুলে শুনে বাড়িতে গিয়ে প্রশিক্ষণের কথা জানিয়েছিল। মেয়ের সহপাঠীদের অনেকেই প্রশিক্ষণে যাচ্ছে শুনে তানিয়াকেও তাইকোন্ডোর কৌশল শিখতে পাঠাচ্ছেন গীতা রায়। বললেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ক্লাসে এসে দেখি, অনেকেই শিখছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে মেয়েটা অনেকটাই শিখে গিয়েছে। বাড়িতে খুনসুটি মারামরিতে দাদাকেও তাইকোন্ডোর কৌশলে প্যাঁচে ফেলে দিচ্ছে।’’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে সন্দীপ্ত বসু মজুমদার দাবি করেছেন, তাইকোন্ডোর প্যাঁচ, কৌশল জানা থাকলে সহজেই কাউকে কাবু করে দেওয়া সম্ভব। সন্দীপ্ত বলেন, ‘‘তাইকেন্ডোতে এমন কিছু সহজ প্যাঁচ রয়েছে যাতে এক মিনিটে সামনের জনকে আঘাত করে দূরে সরিয়ে রাখা যায়, অথবা কিছুক্ষণের জন্য তাঁকে কাবু করা যায়। প্রশিক্ষণে ছাত্রীরা ভালই কৌশল শিখে নিয়েছে।’’ প্রশিক্ষণ শুরুর সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। সন্দীপ্ত জানালেন, আরও বহু ছাত্রী যোগাযোগ করেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সপ্তাহে দু’দিন থেকে বাড়িয়ে চারদিন ক্লাস করানো যায় কি না তা নিয়েই আপাতত ভাবনাচিন্তা করছেন সন্দীপ্তরা।

Girl students Taikonda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy