পুরাতন মালদহের গান্ধী কলোনিতে জল নিতে ভিড়। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
পুরভোটের আগে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়েছিল প্ররিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পের। উদ্বোধনের কেটে গিয়েছে দু’মাস। পরিষেবা থেকে এখনও বঞ্চিত পুরাতন মালদহের বাসিন্দারা। তাই এ বারের পুরসভা নির্বাচনে ‘জল দাও, ভোট নাও’ স্লোগান তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভোট চাইতে গিয়ে তাই জল প্রকল্পের পরিষেবার বিষয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে নেতা নেত্রীদের। তাঁরা একে অপরের উপর দোষারোপ করেই সাধারণ মানুষের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। পুরাতন মালদহ পুরসভায় পানীয় জলের সমস্যা এ বারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে প্রচারে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাম থেকে ডান সব রাজনৈতিক দলই এই জল প্রকল্পের উপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছে। ভোট এলে কখনও এই প্রকল্পের পাইপ পোঁতার কাজ শুরু হত, কখনও বা প্ল্যান্ট তৈরির। এ বার নির্বাচনের আগেই কিছু কাজ বাকি থাকা সত্ত্বেও বিদায়ী পুরবোর্ড উদ্বোধন করে দিয়েছে। তবে বাস্তবে বাসিন্দারা তার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘এখন নেতা-নেত্রীদের প্রশ্ন করা হলে, তাঁরা সরাসরি একে অপরের প্রতি দোষ চাপাচ্ছেন।’’
২০০৭ সালে পুরাতন মালদহ পুরসভায় পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিন বছরের মধ্যে এই জল প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউআল মিশন প্রকল্পে প্রথমে ২২ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পরে এই প্রকল্পের টাকা বাড়িয়ে ৩৪ কোটি করা হয়েছিল। মহানন্দা নদী থেকে জল তুলে পরিশ্রুত করে তা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পুরাতন মালদহ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের লোলাবাগ এলাকায় বসানো হয় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এখান থেকে জল সরবরাহ করা হবে পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডে।
এই পুরসভার তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরবোর্ড এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল। পুরবোর্ডের পরিবর্তন হয়। দখল নেয় তৃণমূল। এরপরই তড়িঘড়ি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয় জলপ্রকল্পের। তবে তার পরিষেবা এখনও অমিল। এই বিষয়ে কংগ্রেসের বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘‘কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস ছিল, সেই সময় এই পুরসভা এলাকার জল প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা দেয়। কারণ এই পুরসভার বাসিন্দাদের জলের সমস্যায় ভুগতে হয়। তবে বামফ্রন্ট ঢিমেতালে জল প্রকল্পের কাজ চালায়। আর তৃণমূল বাকি কাজ শেষ না করে নির্বাচনে চমক দেওয়ার জন্য উদ্বোধন করে দেয়। তাদের এই ব্যর্থতা আমরা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরছি।’’
কংগ্রেসর মতো বিজেপিও সাধারণ মানুষের কাছে পানীয় জলের সমস্যার কথা তুলে ধরছে। বিজেপির জেলা নেতা তথা পুরসভার ১৪ নম্বর ওর্য়াডের প্রার্থী সৌমেন সরকার বলেন, ‘‘জলপ্রকল্পকে সামনে রেখে এতদিন সিপিএম ভোট করেছে। এ বার তৃণমূলও সেই পথে হাঁটছে। অনুষ্ঠান করে সাধারণ মানুষের টাকা খরচ করে জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করল। তবে এক বালতি জলও মানুষ পেল না। যার জবাব মানুষ তাদের দেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’’
এ বিষয়ে পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের বিশ্বনাথ শুকুল বলেন, ‘‘আমরা ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ করেছিলাম। বাকি ছিল মাত্র সাত শতাংশ। এক বছরে তৃণমূল তাই করতে পারল না। তারা মানুষকে ঠকানোর জন্য তারা শুধু উদ্বোধন করেছে। মানুষের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে।’’ বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিভুতিভূষণ ঘোষ বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট ধীরগতিতে জল প্রকল্পের কাজ করেছে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে মানুষকে। আমরা বাকি কাজ করে উদ্বোধন করেছি। খুব দ্রুত মানুষ তার পরিষেবা পাবেন।’’
এই পুরসভার ১৮ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০টি। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। গান্ধী কলোনি, সদরঘাট, রশিলাদহ, তুঁতবাড়ির মতো এলাকায় দেখা যায় মহিলাদের জল নেওয়ার জন্য ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে। এ ছাড়া প্রতিটি ওর্য়াডেই এখনও বহু এলাকায় পাইপ লাইনের জল পোঁছয়নি। তাই পুরবাসী এই জল প্রকল্পের উপর তাকিয়ে রয়েছেন। তবে তার উদ্বোধন হলেও এখনও কাজ বাকি রয়েছে। এখনও বহু এলাকায় পাইপলাইন পোঁতা হয়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও ১০ শতাংশ এলাকায় পাইপলাইন পোঁতার কাজ বাকি রয়েছে। পুরসভার সদরঘাট, হালদার পাড়া, পালপাড়া, নবাবগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় এখনও পাইপ পড়েনি। এই এলাকার বাসিন্দা সুপ্রতিম পোদ্দার, সন্দীপ সরকার প্রমুখেরা বলেন, ‘‘এ বার প্রতিশ্রুতিতে কাজ হবে না। প্ররিশ্রুত পানীয় জল দিতে হবে। তা না হলে তার জবাব দেওয়া হবে ইভিএম মেশিনে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy