E-Paper

ভুবন জুড়েই অসহিষ্ণুতার অতিমারি, সাবধানে এসো

জানো মা, একটা সময় ছিল যখন তেল দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক শীতল থাকত। আর এখন? তেলের ঝাঁঝে সম্পর্ক সেঁকা হয়।

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:২১
জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো।

জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো।

সময় অস্থিরতার। বাতাস অনাস্থার। তার মধ্যেই সমাগত দেবী-আরাধনার লগ্ন। সর্বগ্রাসী আমিত্বের আস্ফালনের মধ্যে কী মন্ত্রে হবে তাঁর অর্চনা? লিখছেন জয়দীপ চক্রবর্তী

নববধূর সাজে শরত এসেছে। মায়ের আগমন-বার্তা বাতাসে। পুজোর আয়োজন, কেনাকাটা— সব সারা। চাওয়াপাওয়ার হিসেব ভুলে উৎসবে শামিল হওয়ার আর মাত্র কিছু সময় অপেক্ষা। মা আসছেন। তবে, একটু সাবধানে এসো, মা।

কারণ, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বসুন্ধরায় এখন বিক্ষোভের মরসুম। ঘর-পাড়া-মহল্লা-রাজ্য-দেশ-দেশান্তরে একই ছবি। কেউ না কেউ কারও মুখোমুখি। সেখানে কথা শুধু ‘আমি’ আর ‘আমার’ নিয়ে। সেই ‘আমি’ ব্রহ্ম না ব্রহ্মদত্যি, বোঝা ভার। ওদিকে পটাপট ভোটে জিতে আসা সরকার উল্টে যাচ্ছে আগুনখোর বিপ্লবীদের দাপটে। ঘনঘোর বিবাদ। তারিফ থেকে তাত্ত্বিক, বন্ধুত্ব থেকে সমদূরত্ব, ভোট চুরি থেকে কর-চুরি, অভিবাসন থেকে মিথ্যাভাষণ— সবেতেই অপ্রসন্নতার অযুত আত্মকথন। ভুবন জুড়ে অসহিষ্ণুতার অতিমারি। কর্পোরেটকে বিঘা-বিঘা জমি দেওয়া হয়েছে শুনে এজলাসে বসে আঁতকে উঠলেন বিচারক। তার পর? তার পর আর কী! ওই সেই কৃষ্ণ-সুদামার গল্প। এ বার এক টাকায় হাজার একর জমি দেওয়ার অভিযোগ। সঙ্গে কেটে ফেলার জন্যে ১০ লক্ষ গাছ। ঠেলা সামলাও! সাধে কি কথায় বলে, ভক্তের আছেন কৃষ্ণ আর কৃষ্ণের আছেন সুদামা।

জানো মা, একটা সময় ছিল যখন তেল দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক শীতল থাকত। আর এখন? তেলের ঝাঁঝে সম্পর্ক সেঁকা হয়। রামু যখন বাবুর গায়ে-মাথায়-কথায়-মেজাজে তৈলমর্দন করত, তাতে বাবু কখনও খুশি হতেন। বকশিস দিতেন। আবার মর্দনকালে বাবুর ঘাড়ে-গর্দানে বেমক্কা টান লেগে গেলে গালও জুটত রামুর। এ সব মেনে নিয়েই খুশি থাকত রামু। মাথায় রাখত গিন্নিমার কথা— বাবু তোকে নিজের লোক বলে মনে করেন বলেই না গাল দেন! বাইরের লোককে কি গাল দেওয়া যায়? রামুও গিন্নিমার কথায় মাথা নাড়ত আর বাবুকে নিজের লোক মনে করে মনে মনে খুশি হত। রামুকে জন্মদিনে ধুতি-ফতুয়াও দিতেন বাবু। গ্রামে গিয়ে সে সব গল্প করত রামু। পরিচিতেরা অবাক বিস্ময়ে রামুর মুখে রামুর নিজের লোকের কথা শুনত। কী সুন্দর করে বলত রামু! আমিও শুনতাম। বিভোর হয়ে যেতাম।

মা, কয়েকটা প্রশ্ন আছে। হৃদিরত্নাকরে জল যদি না থাকে তো কী হবে? সেখানে যদি পাঁক থাকে! তবে, দম-সামর্থ্যে মানুষ ডুব দেবে কোথায়? পাঁকে? আচ্ছা, পাঁকেই তো পদ্ম ফোটে না, মা? মনে হচ্ছে, সেই পাঁকই ছড়িয়েছে দেহে-মনে। আত্মার খবর জানি না। কিন্তু এই অবস্থায় অনুরাগ-অঞ্জন চোখ আর মিলবে কি? মহব্বতের দোকানে বিক্রিবাট্টা বাড়বে? নাকি স্বার্থ আর বিদ্বেষের কাঁধে ভর দিয়ে মগজধোলাই-ই চলবে?

তাই তো বলছি, এখন দিনকাল সুবিধের নয়। সব দেখে, বুঝে, কম কথা বলে সাবধানে এসো! আধার কার্ড সঙ্গে রেখো। এখন ওটাই সব। আর হ্যাঁ, হিমালয় থেকে সমতলে নেমে মোট্টে বাংলায় কথা বলবে না! যে ভাষা যা ভাঙাচোরা জানো, তাই দিয়ে চালিয়ে নিয়ো। বাংলা শুনলেই পরদেশি বলে সোজা গারদে চালান করে দিতে পারে। ছেলেপুলে নিয়ে শেষকালে এক কেলেঙ্কারি! কথাগুলো মনে করে মাথায় রেখো।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

North Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy