Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
তৃণমূল নেতাকে গুলি

ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত মালদহ

ফের মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুরে প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মঙ্গলবার রাতে ইংরেজবাজারের যদুপুরে কালিয়াচক ১ ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতির বাড়িতে ছয় থেকে সাত জনের দুষ্কৃতীদল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় যুব তৃণমূলের সভাপতি সফিকুল বিশ্বাস ও তাঁর এক অনুগামী এসতাদুল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

তৃণমূল নেতার উপর হামলায় ধৃত সেলিম শেখ। —নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল নেতার উপর হামলায় ধৃত সেলিম শেখ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

ফের মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুরে প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মঙ্গলবার রাতে ইংরেজবাজারের যদুপুরে কালিয়াচক ১ ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতির বাড়িতে ছয় থেকে সাত জনের দুষ্কৃতীদল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় যুব তৃণমূলের সভাপতি সফিকুল বিশ্বাস ও তাঁর এক অনুগামী এসতাদুল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এখনও তাঁরা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সেলিম শেখ। তাঁর বাড়ি কালিয়াচকের জালালপুরে। বুধবার ধৃতকে সাতদিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে মালদহ জেলা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হেফাজতে চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হামলার কারন জানার চেষ্টা চলছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

ইংরেজবাজারের যদুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও ঘটনার সূত্রপাত কালিয়াচকের সুজাপুরেই বলে দাবি স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরেই সুজাপুরে ক্ষমতা এবং এলাকার দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠির মধ্যে বিবাদ চলছে। দুই গোষ্ঠীর এক দিকে রয়েছে তৃণমূলের সুজাপুরের অঞ্চল সভাপতি সহরুল বিশ্বাস। যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সফিকুল বিশ্বাসের তিনি দাদা। অপর গোষ্ঠীর নেতা হলেন রুকুউদ্দিন শেখ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুরে এই দুই নেতারই প্রভাব রয়েছে। সহরুল প্রথমে কংগ্রেস কর্মী থাকলেও রাজ্যে পরিবর্তনের পর তৃণমূলে যোগ দেন। আর রুকুউদ্দিন প্রথমে সিপিএম এবং পরে কংগ্রেস। বর্তমানে তিনি তৃণমূলের ব্লকের নেতা। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন রুকু উদ্দিন শেখ। কংগ্রেসের প্রার্থী হামিদুর রহমান বিশ্বাসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। সহরুল বিশ্বাস এবং রুকু উদ্দিনের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের থাকলেও শাসক দলের ছত্রছায়ায় আসার পর থেকে এলাকায় তাঁদের দৌরাত্ব্য বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এমনকি এই দুই জনের বিরুদ্ধে থানাতে একাধিক মামলা রয়েছে। হামলা, পাল্টা হামলারও মামলা রয়েছে।

তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহরুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে রুকুর অনুগামীরা আমার উপরে হামলা চালিয়েছিল। আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এমনকি এলাকার বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় জড়িত রয়েছে সে। অথচ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছে না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রুকু তৃণমূলের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমরা বাধা দেওয়াতেই এদিন ফের আমার পরিবারের উপর রুকুর অনুগামীরা তাঁর নির্দেশেই হামলা চালিয়েছে।’’

অপর দিকে রুকু এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সহরুলের উপর অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইকে খুনের চেষ্টা এবং এলাকায় দুটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রয়েছে সহরুল । এ ছাড়া কলেজে নির্বাচনে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর তার উপরে মামলা রয়েছে। তাঁরা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন। এদিন রাতের ঘটনাতে আমাদের কোনও হাত নেই। মদের আসরে বচসার জেরেই এই ঘটনা।’’

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা জেলার ছোট বড়ো সমস্ত নেতার কাছেই জানা। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহরুল ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের শিবিরে। আর রুকু উদ্দিন ছিলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর শিবিরে। সম্প্রতি সহরুলও মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর শিবিরে যোগ দেন বলে জানা গিয়েছে। তা হলে কেন ফের হামলা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দলীয় একাংশ নেতারা জানিয়েছেন, এক শিবিরে থাকার ফলে নিজেদের অস্তিত্ব কায়েম রাখতেই ফের হামলা হয়ে থাকতে পারে। এই বিষয়ে রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমি রাতেই কলকাতাতে চলে এসেছি। তবে ঘটনা শুনেছি। এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনাকে আমরা প্রশয় দিই না। পুলিশকে আইনত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও ঘটনাটি পরিপেক্ষিতে সাবিত্রীদেবী কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আমার বলার কিছু নেই। পুলিশ পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে।’’

বছর খানেক আগে ইংরেজবাজারের গাবগাছি এলাকায় একটি হোটেলে সহরুলের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল রুকুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ওইদিনই রুকুর ভাই এর উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সহরুলের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই এই দুই গোষ্ঠীর লড়াই বন্ধ ছিল। ফের নতুন করে হামলার ঘটনা ঘটায় অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এই বিষয়ে সুজাপুরের বিধায়ক তৃণমূলের আবু নাসের খান চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই উদ্বেগ জনক। পুলিশকে পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ এদিকে, এই ঘটনার পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব হবে না। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’

সুজাপুর এলাকার ঘটনা ইংরেজবাজারের যদুপুরে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। বছর খানেক আগে সুজাপুরের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছিল তা যদুপুর এলাকাতেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যদুপুরে বছর খানেক আগে একটি বাড়ি তৈরি করেছেন সহরুলের পরিবারের লোকেরা। তাঁরা মাঝে মাঝে এই বাড়িতে এসে থাকেন। সফিকুলের স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এদিন রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘‘হঠাৎ করে পাঁচ থেকে ছয় রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া গিয়েছে। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। কারণ এমন ঘটনা আগে কখনও এলাকায় ঘটেনি।’’ পুলিশের দাবি ধৃতকে জেরা করে বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE