উত্তরবঙ্গের পাহাড়ের চা বাগানের ৩০ শতাংশ অব্যহৃত জমিতে চা পর্যটন নিয়ে আপত্তি তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন জিটিএ প্রধান। সরকারি সূত্রের খবর, অনীতের থেকে পরিস্থিতি শোনার পর মুখ্যমন্ত্রী সচিবদের একাংশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তাতে চা পর্যটনে নতুন সিদ্ধান্তের সরকারি ছাড়পত্র আপাতত মিলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাত অবধি অবশ্য সরকারি ভাবে নতুন কোনও ঘোষণা হয়নি।
শুক্রবার প্রথমে রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন অনীত থাপা। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন জিটিএ প্রধান। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, পাহাড় তো বটেই তরাই এবং ডুয়ার্সের চা বাগানের জমিতে চা পর্যটনের আয়তন বাড়ানোয় ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। এতে চা বাগানের সৌন্দর্য্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আর সবুজ ধবংসের সরকারি ছাড়পত্র এ ভাবে দিলে, আগামীতে বাগানে ‘রিয়েল এস্টেট’ রাজের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব কিছু শোনার পর মুখ্যমন্ত্রী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জিটিএ-র তরফে দাবি করা হয়েছে।
অনীত বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সকে ভালবাসেন। চা বাগানের পরিস্থিতির কথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। পর্যটন বিকাশে আমরাও বিশ্বাসী। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ তিনি জানান, বাগানের জমি এ ভাবে পর্যটনে ছাড়পত্র দিলে পাহাড় তো বটেই চা বাগানের ক্ষতি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বহু মানুষের আপত্তি রয়েছে।
চলতি সপ্তাহে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী চা পর্যটনের নতুন ঘোষণা করেন। তিনি জানান, বাগানের অব্যহৃত ১৫ শতাংশের ববদলে ৩০ শতাংশ জমিতে এবার চা পর্যটন করা যাবে। যা নিয়ে পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা .যায়। বিজেপির সাংসদ রাজু বিস্তা, পাহাড়ের নতুন দলের নেতা অজয় এডওয়ার্ড মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। প্রাক্তন সাংসদ সময় পাঠক থেকে প্রাক্তন জিটিএ চেয়ারম্যান বিনয় তামাংও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। সকলের দাবি, এভাবে সরকারি চা বাগানের জমিতে প্রোমোটার রাজ শুরু হয়ে যাবে।
এদিন জিটিএ-র অন্দরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। জিটিএ-র কয়েকজন অফিসার জানান, পাহাড়ে তো বটেই সর্বত্র চা বাগানের শ্রমিকদের জমির অধিকার নিয়ে আলোচনা চলছে। শ্রমিকদের জমির পাট্টা নিয়ে এখনও অনেক জায়গায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অধিকাংশ জায়গায় শ্রমিকেরা নিজেদের বসে থাকা এবং চাষাবাদ করা জমির পাট্টার দাবি রেখেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলিও তাই চাইছে। সেখানে সরকারিভাবে প্রথমে বাগানের খালি জমিতে ৫ ডেসিমেল জমির পাট্টার প্রসঙ্গ আনা হয়। তা শ্রমিকেরা চা মহল্লা থেকে উচ্ছেদের আসঙ্কা করেন। পরে এ নিয়ে পাহাড়ে সমীক্ষাও চলছে।
এরমধ্যে বাগানের ৩০ শতাংশ অব্যহৃত জমি বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা, হোটেল-রিসর্ট সংস্থার হাতে গেলে শ্রমিক অসন্তোষ আরও বাড়বে। তাতে পাহাড় তো বটেই তরাই ডুয়ার্সে গোলমালের আশঙ্কা থেকে যায়। সেই জায়গা থেকে অনীত থাপা মুখ্যমন্ত্রীকে ওই সিদ্ধান্ত বদলের অনুরোধ করেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)