Advertisement
E-Paper

বৃষ্টির পূর্বাভাসে উদ্বেগ নেতাদের

পূর্বাভাস ছিলই। শুক্রবার সকাল থেকেই ঘূর্ণাবর্তের জেরে কালো মেঘে ঢেকে যায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির আকাশ। ভোটের আগের সন্ধেয় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির জেরে তুফানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে কোচবিহার জেলা তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় একাধিক বুথের সামনে জল জমে গিয়ে দুর্ভোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৩
কোচবিহারে বৃষ্টি। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহারে বৃষ্টি। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পূর্বাভাস ছিলই। শুক্রবার সকাল থেকেই ঘূর্ণাবর্তের জেরে কালো মেঘে ঢেকে যায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির আকাশ। ভোটের আগের সন্ধেয় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির জেরে তুফানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে কোচবিহার জেলা তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় একাধিক বুথের সামনে জল জমে গিয়ে দুর্ভোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আজ শনিবার, ভোটের দিন আকাশ কেমন থাকবে তা নিয়েই আশঙ্কা ডান-বাম, নির্দল সকলেরই। আজ, সকাল ৭টায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি শহরে পুরভোট শুরু হবে। এ বার পুরভোটের প্রচারে একাধিক বার বাধ সেধেছে বৃষ্টি। ছাতা মাথায় করেই প্রচার সেরেছেন নেতা-মন্ত্রীরা। তবে ভোটের দিন বৃষ্টি হলে অনেক ‘অঙ্ক’ বিগড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় ভোট প্রার্থীরা। সেই আশঙ্কাই বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের শুক্রবারের পুর্বাভাসও।

এ দিন দফতরের থেকে জানানো হয়েছে, আগামী তিন দিন জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়িতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়েই। মিকিমের আকাশে থাকা একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও ক্রমশ উত্তরবঙ্গের দিকে এগিয়ে আসছে বলে জানানো হয়েছে। সে কারণে হিমালয় পাদদেশ লাগোয়া এলাকা হওয়ায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহরেই ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এ দিন কোচবিহার জেলাতেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ভোটের দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে পুর্বাভাস দেওয়া হলেও, উত্তরবঙ্গের আকাশের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি সরে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছিল। যদিও, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণাবর্তটি ঠায় উত্তরবঙ্গের ওপরেই রয়ে গিয়েছে। সে কারণে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। বৃস্পতিবার রাত থেকে ঘূর্ণাবর্তটি শক্তি সঞ্চয় করায়, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্প ধেয়ে আসতে শুরু করেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন ইতি মধ্যেই ঝড়ের সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টির জেরে তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের নাককাটিগছ ও দেওচড়াই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিকেল ৫টা নাগাদ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে পাঁচ শতাধিক বাড়ির ক্ষতির খবর এসেছে। বোরো ধান, পাট, ভুট্টা খেতের বিঘের পর বিঘের জমির চাষাবাদ লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। অনেকেরই রাতে ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই।

নাককাটিগছের উপপ্রধান শচীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, “রাজারকুঠি, শিকারপুর, ধাদিয়াল, চামটা, দ্বীপোরপাড় ও নাককাটিগছ মোট ৬টি মৌজা মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটির টাকা বেশি হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়া হবে।” তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের বিডিও রাজু লামা বলেন, “দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে।”

গত বৃহস্পতিবার থেকেই সিকিমে বৃষ্টি হয়েছে। ঝঞ্ঝাটি সিকিম থেকে সরে এ বার উত্তরবঙ্গের দিকে ঘেঁষতে শুরু করেছে বলে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘ঝঞ্ঝার প্রভাবে সিকিমে বৃষ্টি হয়েছে। তবে শনিবারের আগেই সিকিমে ঝঞ্ঝার প্রভাব কেটে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’’

শনিবার থেকে সিকিমে স্বাভাবিক আবহাওয়ার পুর্বাভাস থাকলেও, সিকিম থেকে উত্তরবঙ্গে ঝঞ্ঝা ঢুকে রক্তচাপ বাড়িয়েছে ভোটপ্রার্থীদের। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি পুরভোটের প্রায় সব ওয়ার্ডেই এ বার ডান-বাম মিলিয়ে চার দলেরই প্রার্থী রয়েছে, বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থীরাও চর্চাতে রয়েছেন। ভোটার সংখ্যা কম থাকায়, একটি ভোটই রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পোড়খাওয়া অনেক নেতা-কর্মী পুরসভায় গুনে গুনে ভোট করান বলেও শোনা যায়। সে কারণেই বৃষ্টিতে যদি ‘নিজেদের’ ভোটাররা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে না আসতে পারেন তবে সমীকরণও বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় সকলে।

তার মধ্যেই এ দিন বৃষ্টির জেরে দিনহাটা পুরসভার একাধিক বুথে ঢোকার রাস্তায় জল জমে যায়। কোচবিহারের কয়েকটি বুথের সামনেও জলকাদায় ভোটকর্মীরা সমস্যায় পড়েন। দিনহাটার স্টেশনপাড়া হাইস্কুল, রাজকুমারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঝুড়িপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি নালা তৈরির পাশাপাশি বালির বস্তা দেওয়া হয়। তুফানগঞ্জেও কয়েকটি বুথের সামনের মাঠে জলকাদায় ভোগান্তি পোহান কর্মীরা। দিনহাটার মহকুমা শাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, “কয়েকটি বুথের সামনে জমা জল সরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা অবশ্য জানান, অস্থায়ী ছাউনির কোনও ক্ষতি হয়নি।

সে কারণেই কেউ ইন্টারনেট ঘেঁটে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য জানছেন, কেউ বা মোবাইলের অ্যাপলিকেশনে আবহাওয়ার ‘আপডেট’ খুঁজছেন। শুক্রবারের আকাশের চালচিত্র কাউকেই স্বস্তিতে না রাখলেও প্রস্তুতিও সেরে রেখেছেন অনেকে। বৃষ্টি চলতে থাকলে বয়স্ক বাসিন্দাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে ৫টি টোটো ভাড়া করে রেখেছেন জলপাইগুড়ির একটি ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী। একই ভাবে এক যুব তৃণমূল নেতা দলের বাছাই করা কয়েক জন কর্মীর জন্য ‘রেনকোট’ কিনে দিয়েছেন বলে খবর। শিলিগুড়ির বামেদের এক প্রার্থী বেশ কয়েকটি ছাতা জোগাড় করে রেখেছেন বলে দাবি করেছেন।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান সুবীর সরকারের কথায়, ‘‘শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে শনিবার বৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশ মাঝে মধ্যে পরিষ্কার হলেও, বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হবে।’’ সব মিলিয়ে বৃষ্টি ও ঝড়ের আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছেন প্রশাসনের কর্তা থেকে রাজনৈতিক দলগুলির।

north bengal rain forecast north bengal hailstorm north bengal leaders siliguri weather siliguri corporation poll 2015
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy