Advertisement
E-Paper

হাসি-কান্নায় কাটল ভাইফোঁটার বেলা

সম্বৎসর অপেক্ষার পরে ভাইফোঁটায় কারও গায়ে উঠেছে নতুন পোষাক। কারও দুয়ারে শুধুই কান্নার রোল। বিষাদ ছুঁয়ে গিয়েছে পড়শিদেরও। কোথাও আবার শিশুকে তুলে নিয়ে রক্তাক্ত করে ঝোপে ফেলে দেওয়ায় আতঙ্কে-লজ্জ্বায় হিম হয়ে রয়েছে আস্ত আদিবাসী গ্রাম। আবার কোথাও অনাথ আশ্রমে গিয়ে ভাইফোঁটা নিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের অফিসাররা। কোথাও কুষ্ঠাশ্রমে হাজির হয়েছেন প্রতিবন্ধীরা। সেই হাসি-কান্নার ছবিটা একঝলকে তুলে ধরলেন কিশোর সাহা। পাহাড়ে নেপালিদের ঐতিহ্যমণ্ডিত পোষাক পরেছেন প্রায় সকলেই। ভাই বসার পরে বোনেরা গোল হয়ে তাঁকে তিন বার ঘুরে মালা পরিয়ে দিয়েছেন। চালের গুঁড়োর টিকা পরানো হয়েছে কপালে। ভাই সটান বোনের পায়ে মাথা সলুটিয়ে আশীর্বাদ নিয়েছে।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৫
কোচবিহারে দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধীদের  ফোঁটা।

কোচবিহারে দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধীদের ফোঁটা।

খুশির বাতাস পাহাড়ে

পাহাড়ে নেপালিদের ঐতিহ্যমণ্ডিত পোষাক পরেছেন প্রায় সকলেই। ভাই বসার পরে বোনেরা গোল হয়ে তাঁকে তিন বার ঘুরে মালা পরিয়ে দিয়েছেন। চালের গুঁড়োর টিকা পরানো হয়েছে কপালে। ভাই সটান বোনের পায়ে মাথা সলুটিয়ে আশীর্বাদ নিয়েছে। ভাইফোঁটা দিনে পাহাড়ের ঘরে ঘরে এমনই ছবি দেখা গিয়েছে। দিনভর ঝকঝকে আবহাওয়া চিল প্রায় সর্বত্রই। পাহাড়ের ম্যাল চৌরাস্তা, ডম্বর চক, কার্সিয়াঙের ট্যুরিস্ট লজ সব জায়গাতেই উপচে পড়েছে ভিড়।

উপহারে চোখে জল

সকাল থেকেই উদ্দীপনা ছিল দেখার মতো। জায়গাটা শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে দার্জিলিং মোড়ের পঞ্চনই নদীর ধারে। চেতনা কুষ্ঠাশ্রম। সেখানে তদারকি করছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা চিকিৎসক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য ও আরেক নেতা মদন ভট্টাচার্য। বেলা একটু বাড়তেই হাজির হলেন ‘অনুভব’-এর একদল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়ে। হইহই করে শুরু হয় ভাইফোঁটা।

অনাথ আশ্রমে ডিসি

স্নানটান করে ভাইফোঁটা নিতে হাজির শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) ইন্দ্র চক্রবর্তী। কে বুঝবে, সোমবার রাত ৩টে পর্যন্ত প্রধাননগরে জমি নিয়ে দু-দলের গণ্ডগোল ঠেকাতে ঠায় বসেছিলেন। নানা চাপেও কড়া পদক্ষেপ নিতে এতটুকুও পিছ পা হননি। সেই ইন্দ্রবাবুকে দেখা গেল হাকিমপাড়ায় বিবেকানন্দ স্কুলের অদূরে চাইল্ড ইন নিড ইন্সটিটিউটের সর্ট স্টে হোমে।

গনিখানের জন্মদিনে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় মৌসমও। - নিজস্ব চিত্র

কাঁদলেন সঙ্গীতার দাদা

রাগ হওয়ায় অনেকদিন বোনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। তা বলে ভাইফোঁটা এলেই মনটা কেমন করে ওঠে দাদার। ফি বছর তবুও বোনের দেখা পেয়েছেন। এ বার বোনটা যে কোথায় তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না শিলিগুড়ির শান্তিনগরের শম্ভু কুণ্ডু। ওঁর বোন সঙ্গীতা গত ১৭ অগস্ট শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি জিম-পার্লার পরিচালক সংস্থার অফিসের পরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। বহু কষ্টে পুলিশে অভিযোগ করিয়েছেন। কিন্তু, তিন মাস হতে চললেও তদন্ত এতটুকুও কেন এগোয়নি সেটাই বুঝছেন না শম্ভুবাবু। তিনি ভেঙে পড়লেন যেন। বললেন, ‘‘এখন বোনের গতিবিধি নিয়ে কতজনে, কত কথা বলছেন। কিন্তু, একটা মেয়ের গতিবিধি নিয়ে যত প্রশ্নই উঠুক না কেন, সে দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেলে খোঁজার চেষ্টা হবে না কেন? আমার বোন বেঁচে আছে সেটাই পুলিশ বলুক। তা হলেই হবে।’’ পুলিশের অফিসারদের দাবি, তাঁরা সঙ্গীতাকে খুঁজেই চলেছেন। কিন্তু, কোনও সূত্রই নাকি পাচ্ছেন না!

নিঃশব্দে কাঁদেন যাঁরা

গত বছরও ভাইফোঁটায় সকাল থেকে দারুণ খাবারের আয়োজন। দুপুরের পরে বিকেলেও নাচগানের ব্যবস্থা। আতসবাজি পাঠিয়ে রাতেও জমাটি খাওয়া-দাওয়া হয়েছিল। রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোমে। কিন্তু, অনিয়ম ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে গত সাড়ে তিন মাস ধরে বরখাস্ত হয়ে রয়েছেন হোমের অধ্যক্ষ। হোমের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক পিনাকী গুপ্তও ছুটিতে রয়েছেন। তাই তেমন আয়োজন ছাড়াই ভাইফোঁটা হল সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনস্থ রায়গঞ্জের সুর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোম কর্তৃপক্ষ! জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী মূক ও বধির কিশোর কিশোরীদের সূর্যোদয় হোমে রাখা হয়! বর্তমানে ওই হোমে ৩৩ জন কিশোর ও ৬ জন কিশোরী রয়েছে! এলাকার যে বাসিন্দারা ওই উৎসবে সামিল হতেন, তাঁদের কয়েকজন বললেন, ‘‘ওরা তো কতাই বলতে পারে না। ওদের হয়ে কে প্রতিবাদ করবে! তাই ওঁরা নিঃশব্দে কাঁদে।’’

(সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য, নমিতেশ ঘোষ, রেজা প্রধান)

bhaifota happy sorrow
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy