Advertisement
E-Paper

মুখ্যমন্ত্রীর জন্য হেলিপ্যাড, ধান কাটার তোড়জোড়

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী হেলিপ্যাড। সেই হেলিপ্যাডের পাশেই বিঘের পর বিঘে ধান খেত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন ওই হেলিপ্যাডে নামবেন তখন কপ্টারের পাখার হাওয়ায়, জনতার ভিড়ে নষ্ট হতে পারে খেতের ধান।

নমিতেশ ঘোষ ও অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৫ ২১:০৮

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী হেলিপ্যাড। সেই হেলিপ্যাডের পাশেই বিঘের পর বিঘে ধান খেত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন ওই হেলিপ্যাডে নামবেন তখন কপ্টারের পাখার হাওয়ায়, জনতার ভিড়ে নষ্ট হতে পারে খেতের ধান। এই যুক্তিতেই কোচবিহারের মাথাভাঙায় পরিণত হওয়ার আগেই আবাদি জমির ধান কাটার তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আগামী ২ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মাথাভাঙার গুমানিরহাটে সভা করবেন। গুমানিরহাট কিষান মান্ডি প্রাঙ্গণ লাগোয়া মাঠে ওই সভার আয়োজন তুঙ্গে উঠেছে। মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। সভাস্থল থেকে প্রায় এক কিমি দূরে হেলিপ্যাড তৈরির কাজও শেষ। তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, হেলিপ্যাডের লাগোয়া যে বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানখেত রয়েছে তা ইতিমধ্যে পেকে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সে জন্যই কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কা এড়াতে ধান কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের একাংশের অবশ্য দাবি, সমস্ত খেতের ধান ভাল ভাবে পরিণত হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তার পরেই তাঁরা ধান কাটবেন বলে ভেবেছিলেন।

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই কৃষকেরা আমাদের দলের সমর্থক ও কর্মী। তা ছাড়া ধান পরিণত হয়েছে। জনতার ভিড়ে যাতে কারও ফসলের এতটুকু ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে সে জন্য আগাম সতর্কতা হিসাবে দলের তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়ে সকলের ধান কেটে বাড়ির গোলায় পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” মাথাভাঙার বিধায়ক বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন অবশ্য দাবি করেছেন, ধান পরিণত না হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয়। বনমন্ত্রী বলেন, “ধান পরিণত হয়নি বলে কিছু মানুষ অপপ্রচার করছেন। আমি নিজে এলাকায় গিয়েছি। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা নিজেরাই ধান কাটার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।” যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘দিন সাতেক পরে ধান কাটা হলে ভাল হত। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বলা সম্ভব হবে না। তাই নেতারা চাইলে ধান কেটে নেব।’’

এর আগে জয়ন্তীতে মমতার সফরের জন্য শতাধিক পর্যটকের বুকিং বাতিলের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরে ধান কাটার অভিযোগকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে বিরোধীরা। শনিবার শাসক দলের ওই মনোভাব জানাজানি হতেই বিরোধীরাও ক্ষোভের কথা জানিয়ে দেন। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাদেশিক কৃষকসভার নেতা অনন্ত রায় বলেন, “রাজ্যজুড়ে কৃষকদের দুরবস্থা চলছে। ধান, পাটের দাম নেই। কোচবিহারের অনেক কৃষক পরিবারের লোকেরা বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে দিনমজুরির কাজে গিয়েছেন। এই অবস্থার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য একফালি জমির ধান কাটা হলেও তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হবে। আমরা ধান কেটে সভা আয়োজনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” বিজেপি-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “জেলায় ধানের দাম মণ প্রতি ৪০০ টাকায় নেমেছে। জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনা হচ্ছে না। তৃণমূল কতটা মেকি কৃষক দরদি তা ধান কাটার ওই তোড়জোড়েই সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর ওই সভা ঘিরে গোটা জেলা জুড়েই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে সভাস্থল ও হেলিপ্যাড চত্বর ঘুরে দেখে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ দলের সদস্যরা। সভাস্থল লাগোয়া এলাকায় আলোর জন্য তড়িঘড়ি বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন। চার দিন কোচবিহার ও ডুয়ার্সের একাধিক এলাকায় সভা করার কথা রয়েছে তাঁর। ২ নভেম্বর মাথাভাঙায়, ৩ নভেম্বর আলিপুরদুয়ারে সভা করবেন তিনি। জয়গাঁ ও মালবাজারেও প্রশাসনের আয়োজিত সভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রিবাসের জন্য রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী-সহ ডুয়ার্সের একাধিক বনবাংলো নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু এলাকায় বুকিং বাতিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বিরোধীদের বক্তব্য, সভার নামে সরকারের কোষাগার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করা হচ্ছে।

mamata cm mathabhanga helipad north
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy