এই হেলমেট নিয়েই অনেকে তেল ভরে নেন। — নিজস্ব চিত্র
পাম্পের এক কোণে ঝুলছে একটি হেলমেট। তেল ভরতে এসে মোটরবাইক থেকে নেমে সেই হেলমেট পরে নেন চালক। যান পাম্পের তেল ভরার যন্ত্রের কাছে। তেল ভরা শেষ। তার মানে হেলমেটের কাজও শেষ। তা যথাস্থানে রেখে ফের নিজের গন্তব্যে যাত্রা।
এমনই চলছে কোচবিহারের বেশ কয়েকটি পেট্রোল পাম্পে। কারণ, যেখানে তেল ভরার যন্ত্র রয়েছে, তার উপরেই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাতে হয়েছে। সেই ক্যামেরায় বিনা হেলমেটে তেল ভরানোর ছবি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্যই এমন ব্যবস্থা। জেলা শহর কোচবিহার তো বটেই দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ ও তুফানগঞ্জেও বেশ কয়েকটি পাম্পে এমন ঘটনা ঘটছে নিত্যদিন। কোথাও আবার বিনা হেলমেটে তেল দিতে পাম্পকর্মী রাজি হচ্ছেন না বলে আরোহী অন্য কারও মাথায় হেলমেট দেখলেই বলে উঠছেন, “দাদা কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেবেন, পেট্রোল নিয়েই ফেরত দেব।” কেউ মানতে না চাইলে কাকুতি-মিনতি করে ‘ম্যানেজ’ করে নিচ্ছেন হেলমেট।
পাম্প মালিকেরা অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। অল ইন্ডিয়া পেট্রোল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অতনু সেনগুপ্ত , “কে কোথায় কী ভাবে ম্যানেজ করছেন জানি না। আমরা মাথায় হেলমেট না থাকলে পেট্রোল দিচ্ছি না। আর নির্দিষ্ট কোনও পেট্রোল পাম্পে হেলমেট থাকতেই পারে। অনেক কর্মী মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু ওই হেলমেট কেউ ওই ভাবে ব্যবহার করে থাকলে তা অন্যায়।” কোচবিহারের একটি পাম্পের মালিক ভানু পাল বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ স্পষ্ট ভাবে মেনে চলছি। অনেক ক্ষেত্রে অনেক চালক হেলমেট ছাড়া পেট্রোল চেয়ে চাপ দেন। আমরা তা মেনে না নিয়ে তাঁদেরও সচেতন করার চেষ্টা করি।”
তবে সচেতনতায় যে কাজ হচ্ছে না, সে কথা কয়েকটি পাম্প ঘুরলেই বোঝা যাচ্ছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন দাবি করেন, হেলমেট ব্যবহার নিয়ে বাইক চালকদের সচেতন করার একাধিক অনুষ্ঠান তাঁরা করেছেন। তিনি বলেন, “আরও সচেতনতা জরুরি। সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কোথাও অনিয়ম হচ্ছে কি না তা দেখা হবে।” তবে কেবল সচেতনতা নয়, প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে কড়া হওয়া দরকার বলে মনে করছেন পাম্প মালিকদের অনেকেই। একটি পাম্পের কয়েকজন কর্মী দাবি করেন, তাঁদের কাছে হেলমেট থাকে। তবে তা তেল ভরতে দেওয়ার জন্য রাখা হয় না। কিন্তু কখনও কখনও কেউ শাসক দলের নেতা-কর্মী বলে, কেউ আবার পুলিশের লোক বলেও ভয় দেখান। এক কর্মী বলেন, “প্রতিবাদ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হয়। তাই দেখেও না দেখার ভান করে থাকি আমরা।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “নিয়মিত তল্লাশি করা হয়। হেলমেট না থাকার জন্য প্রতিদিন জরিমানা করা হচ্ছে। তার পরেও কেউ কেউ ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy