Advertisement
E-Paper

বহুদিন পর ঠাকুরের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করবেন বিমান আর মলিনা

মলিনার চোখ চিকচিক করে ওঠে। মনে পরে কত কথা।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০৬:৫৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আবার বসন্তোৎসব! আবার দোল! ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি হাসি ভেসে ওঠে!

ইস্‌! কতদিন রং খেলা হয়নি! যেন নিজেকে নিজেই শোনান বিমান!

ঘরের এক কোণে আবিরের ছোট প্যাকেট। আজ, দোলের দিন প্রথমে ঠাকুরের পায়ে দিয়ে প্রণাম করবেন বিমান আর তাঁর স্ত্রী মলিনা। তার পর নিজেরাও রাঙিয়ে তুলবেন পরস্পরকে। মলিনার চোখ চিকচিক করে ওঠে। মনে পরে কত কথা। এক সময় মনে হয়েছিল, সব বুঝি শেষ! আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

মৃত্যুর কি কোনও রং আছে? আছে হয়তো! হয়তো-বা নেই! কখনও যদি মনে হয়, অসুস্থতার অন্তিম পরিণতি মৃত্যু বা শুধু বসে থাকা এক অন্তিমের অপেক্ষায়। তার পর জীবনে কোনও রং থাকে? গেরুয়া-লাল-সবুজে দোল বা হোলির দিনে কেউ কি রঙিন হয়ে ওঠার আকর্ষণ বোধ করে? মনকেমন করা হাওয়া বইতে থাকে। ভেসে বেড়াতে থাকি আমরা। ভেসে বেড়ায় আমাদের মন। এক প্রান্ত ছুঁয়ে যেন আরও এক অন্য প্রান্তে ছুটে যায়। বাধা মানে না। কাঁটাতার ডিঙিয়ে আকাশে, বাতাসে মিশে যায়। কোকিলের কুহুতানে যেন প্রেম রয়েছে, যা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। এমনই কত বসন্ত এসেছে। ভাললাগার। ভালবাসার।

এই অনুভূতি বিমান মিত্রের। গল্প নয়, সত্যি। কোচবিহারের রাজারহাটের বাসিন্দা বিমান এই বসন্তেই খুঁজে পেয়েছিলেন মলিনাকে। জীবন এক লহমায় রঙিন হয়ে যায়। তার পর দোল আসে। হোলি আসে। রঙের ছোঁয়ায় স্বর্গীয় সুখ খুঁজে পান তাঁরা। তার পর তো বিক্রম এল। তাঁদের সন্তান। আরও কত আনন্দ এল। আরও কত রং জড়িয়ে গেল জীবনে। দোলের দিন দিনভর হুল্লোড় চলত। এমন ভাবেই চলছিল জীবন। আর পাঁচটা পরিবারের মতো। বছরকয়েক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিমান। ক্রমশ অসুস্থতা বাড়তে থাকে। এ-ডাক্তার, ও-ডাক্তার করে অবশেষে জানা যায়, বিমানের দু’টি কিডনিই বিকল হয়ে যাচ্ছে। যে অবস্থা ক্রমশ নিশ্চিত মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষকে। বিমান আর মলিনা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকবছর ধরে অসুস্থতা চলছিল। ২০১৩ সালে জানা যায়, বিমানের কিডনি অচল হয়ে গিয়েছে। অন্ধকার নেমে এসেছিল তাঁদের জীবনে।

সারের দোকান রয়েছে বিমান মিত্রের। সেই দোকানও আর নিয়মিত খোলা হত না। নাবালক ছেলে বিক্রম তখন সদ্য স্কুলছাত্র। বিমান জানান, ডায়ালিসিস করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চলতে থাকে। সঙ্গে চলতে কিডনি-দাতার খোঁজ। কিন্তু কে দেবেন কিডনি, কাউকেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। স্বামীকে এই অবস্থায় দেখে মেনে নিতে পারেননি মলিনা। মনে মনে ঠিক করে ফেলেন, নিজের কিডনি দান করেই সুস্থ করে তুলবেন স্বামীকে। সেই সিদ্ধান্ত মতোই কাজ শুরু করেন মলিনা। অনেকেই আপত্তি করেন। আত্মীয়দের অনেকেই বলতে থাকেন, এই অবস্থায় দু’জনের ক্ষতি হলে এক বড় সমস্যায় পড়তে হবে বিক্রমকে। বিমানের কথায়, ‘‘আমার স্ত্রীকে সবাই বলেছিল, একজন তো শেষ! তুই আর নিজেকে শেষ করিস না! তা হলে সন্তানকে কে দেখবে!” কিন্তু আত্মীয়-পরিজনের কথায় মোটেই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠেননি মলিনা। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে করতে নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে পড়েন তিনি। একটি কিডনি দান করেন তিনি এবং পুনর্জন্ম হয় বিমানের।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। চার মাস সেখানে থাকার পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে বাড়ি ফেরেন বিমান। তার পরেও বহু দিন শষ্যাশায়ীই থাকতে হয় তাঁকে। পনেরো দিন অন্তর ছুটতে হয়েছে কলকাতায়। ক্রমশ কলকাতায় যাওয়ার সময়-দুরত্ব বাড়তে থাকে। এখন ছয় থেকে আট মাস পর পর কলকাতায় চেকআপে যেতে হয় তাঁকে। তাঁর সঙ্গে যান স্ত্রী মলিনাও। নানা বিধিনিষেধের মধ্যে চিকিৎসক এ কথাও বলে দিয়েছিলেন, রঙের ধারেকাছে না থাকতে।

দীর্ঘদিন রং থেকে দূরেই থেকেছে এই পরিবার। এ বার অবশ্য অন্য ছবি! মলিনাও এখন সুস্থ। ভেষজ আবিরে পরিবারের সঙ্গে এ বার রং খেলছেন তাঁরা। বিমান বলছেন, “ফের আমরা সবাই মিলে রং খেলতে পারছি! কী যে ভাল লাগছে, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না!’’

বসন্ত-মাহাত্ম্য!

Holi Holi Celebration Cooch Behar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy