বাংলাদেশ থেকে আসা ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কোচবিহার সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
যে পরিকাঠামো তৈরি করা হবে তাতে থাকার ঘরের পাশাপাশি রান্নাঘর, শৌচাগার, শিশুদের খেলার জায়গা, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, রাস্তা এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারি দফতরগুলিকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প জমা দিতে বলা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ও পারের বাসিন্দাদের সীমান্ত পার হওয়ার পরে, তাঁদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের সব দফতরের সচিবরাই চলতি সপ্তাহে কোচবিহারে এসে পরিকাঠামো তৈরির কাজ খতিয়ে দেখবেন বলে স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন। এ দিন বৈঠক শেষে তিনি দিনহাটার কৃষিমেলা বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির মাঠ এবং ভবন রয়েছে। ওই এলাকায় একটি ত্রাণ শিবির করার কথা ভাবছে প্রশাসন।
স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেববাবু অবশ্য বলেন, “ছিটমহল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি ছাড়াও প্রশাসন, পুলিশ ও অন্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আপাতত আর কিছু বলতে পারছি না।” একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর কথায়, “উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে পুনর্বাসন এবং এ পারের ছিটমহল এলাকায় উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও ওই বাসিন্দাদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড তৈরির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল রয়েছে। বাসিন্দারা সংখ্যা ১৪ হাজারের কিছু বেশি। একই ভাবে বাংলাদেশের ভূখন্ডের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। সেখানে বাসিন্দার সংখ্যা ৩৭ হাজারের কিছু বেশি। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যরাত থেকেই ছিটমহল বলে কিছু থাকছে না। ছিটমহলের বাসিন্দারা যেখানে থাকতে চাইবেন তাঁদের সেখানে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে। সে জন্য আগামী ৬ জুলাই থেকে দশ দিন দুই দেশ যৌথ ভাবে জনগণনা করবে। সে সময় বাসিন্দাদের ছবিও তুলে রাখা হবে। সে হিসেবেই হবে তাঁদের দেশ বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
প্রশাসন মনে করছে, সিংহভাগ বাসিন্দাই এ দেশে থাকতে চাইবেন। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজে নেমেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে দিনহাটা, মাথাভাঙা এবং মেখলিগঞ্জে তিনটি সরকারি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই জায়গাগুলিতেই বাসিন্দাদের অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। দুই বছর পরে তাঁদের স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে যাতে কোনও গাফিলতি না থাকে তাঁর উপরেই স্বরাষ্ট্রসচিব মূলত বৈঠকে জোর দিয়েছেন। পর পর তিনি তিনটি বৈঠক করেন তিনি। প্রথমে জেলার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রবীন্দ্রনাথবাবু ছাড়াও প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিধায়ক হীতেন বর্মন, সাংসদ রেণুকা সিংহ। সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া সহ জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধখ্য ও সভাপতিরা ছিলেন। পরের বৈঠকে জেলা প্রশাসন এবং বিদ্যুৎ, পূর্ত সহ সমস্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শেষ বৈঠকে তিনি পুলিশ এবং ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে করেন।
তিনটি বৈঠকেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজ কানোজিয়া, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সচিব মনোজ পান্থ, জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার বরুণ রায়, রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি জ্ঞানবন্ত সিং, কোচবিহারের জেলাশাসক পি ঊল্গানাথন, পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সকলের কাছেই পুনর্বাসন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জানতে চান স্বরাষ্ট্রসচিব। জেলা প্রশাসনের তরফে একটি ত্রাণ শিবিরের জন্য একটি মডেল ঘর দেখানো হয়। তা নিয়ে আপত্তি ওঠায় তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছিটমহলে নিরাপত্তার যাতে কোনও খামতি না থাকে সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।