নোট বাতিলের জেরে খাবারের টান পড়েছে কলুর বলদেরও! অবশ্য এ ক্ষেত্রে বলদ নয়, কলুতে বাঁধা ছিল একটি ঘোড়া। নাম রাজা। খাবারে টান পড়ার আশঙ্কায় ঘানি টানার বাইরে ঠিকে কাজ খুঁজছে রাজার মনিব জহিদুল রহমান। পরিচিতদের পাশাপাশি অনেকের কাছেই দরবার শুরু করেছেন। অবস্থা না বদলালে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হবেন কি না, সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছেন। তা ছাড়া কী ই বা করার আছে। তিনি বলেন, ‘‘হাজার হোক এত দিনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী বলে কথা। ব্যবসায় মন্দা বলে তো বেচে দেওয়া যায় না!’’
জাহিদুলের আদি বাড়ি তুফানগঞ্জের চিলাখানায়। তবে কোচবিহার শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘানির তেল তৈরির ব্যবসা করেন। প্রায় দু’বছর ধরে তেল তৈরির ঘানি টেনে যার দিন গুজরান। জাহিদুলের রোজগার মন্দ ছিল না। তাই দৈনিক রাজার মুখে পছন্দের মেনু তুলে দিয়েছেন হাসি মুখে। রোজ এতটা খাটুনির পরেও যাতে শরীরটা ভেঙে না পড়ে। মেনু তালিকায় থাকে ১০ কেজি ভুসি, ২ কেজি আটা, ১ কেজি গুড়, ১ কেজি ছোলা তো আছেই, মাঝে মধ্যে কচি ঘাসও তুলে দিতেন রাজার মুখে। তাতে সাকুল্যে দিনে গড়ে অন্তত ১৫০ টাকা খরচ হয়। ওই খরচ জোগাড় নিয়েই চিন্তায় জাহিদুল। তিনি বলেন, “নোট বাতিলের গেরোয় ব্যবসার মন্দা এক মাস পেরিয়েছি। ঘানি ঘোরানোর সময় রাজা যেমন হাঁপিয়ে ওঠে, তেমনি সংসারের ঘানি টানতে আমিও হাঁপিয়ে উঠেছি।’’ তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত রাজার মেনু কাঁট ছাট করেননি। তিনি বলেন, ‘‘যা অবস্থা ওর একটা অন্য কাজ না পেলে মুশকিল, অনেককে বলে রেখেছি। দেখি কী দাঁড়ায়।”
সারা দিনে রাজা ঘানি ঘোরানোয় আড়াই লিটার তেল হয়। যার বাজার দাম এক হাজার টাকা। সর্ষে কিনতেই খরচ লাগছে ৬০০ টাকা। তার উপর নোটের সমস্যায় ক্রেতা কমেছে। যাঁরা আসছেন খুচরো টাকার সমস্যায় তাঁদেরও অনেককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। পুরো তেল বিক্রিই হচ্ছে না। রাজার খোরাকি, শ্রমিকের হাজিরা খরচ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ক’টাকা হাতে থাকে বলুন।’’
তেল নিতে এসেছিলেন বোকালির মঠের রাজু সূত্রধর। জাহিদুল তাঁকেও বলেন, রাজার জন্য শিশুদের ঘোরোনো, মালবাহী গাড়ি টানার মতো দু’এক ঘন্টার কোনও কাজ পাওয়া যায় কি না, দেখতে। তিনি আশ্বাস দিয়ে গেলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy