গোটা জেলা জুড়ে নির্মল মিশন কর্মসূচি নিয়ে যখন জোরদার প্রচার চলছে, ঠিক সেই সময় খোলা মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক মহিলার৷ মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ির দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে৷ এই ঘটনায় নির্মল জেলা গড়ার ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট কারণও রয়েছে৷
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে অবস্থিত দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতটি৷ খোদ পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে শতকরা ৭৫ ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই৷ বছর খানেক আগে এক-দেড় হাজার পরিবার শৌচাগারের জন্য অর্থ জমা করলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও তা হয়নি৷ যার জেরে শৌচকর্মের জন্য ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ মানুষেরই ভরসা খোলা মাঠ৷ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বাসিন্দা জরিনা খাতুন বেগমের ক্ষেত্রেও ভরসা তাই৷
জানা গিয়েছে, জরিনা খাতুন বেগমের বাড়ি দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানিকগঞ্জের শালবাড়ি এলাকায়৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু ওই গৃহবধূর বাড়িতেই নয়, গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মতোই শালবাড়িতেও বেশিরভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই৷ ওই গৃহবধূর আত্মীয় রাজ্জাকুল হক বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ২৫-৩০টা বাড়ি রয়েছে৷ যার মধ্যে খুব বেশি হলে দশ-বারোটা বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে৷ বাকিদের ভরসা খোলা মাঠই৷’’
এমনই এক পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ খোলা মাঠে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ৷ সেখানেই তিনি সর্পদষ্ট হন। বাড়ির লোকেরা তড়িঘড়ি তাঁকে এক ওঝার কাছে নিয়ে যান৷ কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ পরে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে৷ সেখানে এ দিন তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত হয়৷
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রীতা পাহাড়ি বলেন, ‘‘এলাকার ৭৫ ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই৷ টাকা জমা দেওয়ার পরও বছর খানেক ধরে এক-দেড়হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হচ্ছে না৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই মানুষগুলির ভরসা তো খোলা মাঠই হবে৷’’ কিন্তু কেন বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার হচ্ছে না? প্রধানের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বিডিও-কে বারবার বলেছি৷ যে ঠিকাদার কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁকেও বহুবার বলা হয়েছে৷ কিন্তু কাজ হচ্ছে না৷’’ শুধু তাই নয়, স্থানীয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি নৃপতিভূষণ রায়ের অভিযোগ, নির্মল গ্রাম নিয়ে এলাকায় প্রচারও খুব একটা হয় না৷
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও তাপসী সাহা বলেন, ‘‘শৌচকর্ম করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মহিলার মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ ওই গ্রামে শৌচাগার তৈরির কাজ কেন আটকে রয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না৷ তবে দ্রুত যাতে বাড়ি বাড়ি তা তৈরি হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’ জেলাশাসক রচনা ভকতও বলেন, ‘‘ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যাতে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার গড়ে ওঠে এবং মানুষ তা ব্যবহার করেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy