বধূকে শ্বাস রোধ করে খুন করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্বামী ও দুই ছেলে-সহ পুত্র বধূর বিরুদ্ধে। খুনের পরে ওই ঘটনাকে তারা আত্মহত্যা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। রবিবার ফালাকাটার অরবিন্দপাড়ার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পুরবী কর (৪৮)।
গত ২৯ মার্চ ভোরে ওই বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে তাঁকে খুন করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এলাকা জুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়। তবে ঘটনার সাত দিন পরে রবিবার মৃতার বৃদ্ধা মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই রাতে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছোনোর আগেই গা ঢাকা দেয় অভিযুক্ত কাপড় ব্যবসায়ী দুলাল কর তার দুই ছেলে ও পুত্রবধূ।
ফালাকাটা থানার আইসি ধ্রুব প্রধান বলেছেন, ‘‘মৃতার মায়ের দায়ের করা অভিযোগের পর চার জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একত্রিশ বছর আগে দুলালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল পুরবী দেবীর। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ের কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তবে বছর পাঁচেক আগে বড় ছেলের বিয়ের পর থেকেই পূরবীদেবীর সঙ্গে নিয়মিত স্বামী, দুই ছেলে ও পুত্রবধূর বিবাদ হতো বলে তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ। ২৮ মার্চ রাতে প্রতিবেশীরা পূরবীদেবীর চিৎকার শুনতে পান। পরের দিন ভোরে লোকজন রেলিংবিহীন তিন তলার ছাদে আগুন দেখে ছুটে গিয়ে তাঁকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ছাদে এক জায়গায় হাঁটু গেড়ে বসে থাকা দেহটি দেখে ঘটনাটি নিছক আত্মহত্যা নয় বলে তাঁদের সন্দেহ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুলাল-সহ তাঁর দুই ছেলে দেবব্রত ও জয় এবং পুত্রবধূরা বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করতে মরিয়া হয়ে পড়ে। গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগালেও পূরবীদেবী কেন চিৎকার করলেন না তা নিয়ে সন্দেহ জাগে সকলের মনে। পূরবীদেবীর বাপের বাড়ি শহরের সুভাষপল্লি এলাকায়। তাঁর ছোট ভাই উজ্জ্বল দে সরকার কলকাতা পুলিশে কর্মরত। রবিবার তিনি ফালাকাটা পৌঁছে প্রতিবেশীদের কাছে সমস্ত তথ্য পাওয়ার পর তাঁদের মা গীতাদেবীকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। উজ্জ্বল বাবুর কথায়, ‘‘বড় ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকে দিদির উপর সকলে মিলে অত্যাচার চালাত। দিদিকে হত্যা করে পুড়িয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সাজায় ওরা। আমরা দোষীদের শাস্তি চাইছি।’’
দুলাল-সহ তার পরিবারকে পাড়ায় থাকতে দেওয়া হবে না বলে অরবিন্দ পাড়ার লোকজন এ দিন পাড়ার মোড়ে মোড়ে ব্যানার টাঙিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পুলিশ যাতে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দেয় সে দাবিতে সোমবার বিকেলে পাড়ার তিনশো বাসিন্দা জড়ো হয়ে বৈঠক করে আন্দোলনে নামবেন বলে ঠিক করেছেন। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য ভবতোষ সাহার কথায়, ‘‘স্বামী ও ছেলে এবং দুই পুত্রবধূ খুনের ঘটনায় জড়িত। ওই মহিলার উপর অত্যাচার করত তারা সকলে মিলে। সকলের কঠোর শাস্তি চাইছি। তারা ঘটনায় জড়িত না হলে কেন বাড়ি ছেড়ে পালাল তাঁরা।’’
পূরবীদেবীর মা গীতা দেবী বলেছেন, ‘‘ও যে বাড়ির সকলের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে তা মেয়ে আমায় মৃত্যুর আগে বলেছিল। অভিযুক্তরা কঠোর শাস্তি না পেলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে না।’’
পূরবী দেবীর লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দা শিবানী দত্তের কথায়,‘‘ দগ্ধ অবস্থায় দেহ মেলার আগের রাতে পূরবী দেবীর চিৎকার শুনেছি। পরের দিন ভোরে দেখি ছাদে তাঁর দেহ পড়ে আছে।’’ পাড়ার লোকজনের কথায়, ‘‘আগের রাতে মারধর করে ওই গৃহবধূকে হত্যা করার পর লাশটি ছাদে রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’’ পুলিশ জানিয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy