নজরে: আলিপুরদুয়ারের দক্ষিণ পাকুড়িতলা এলাকায় শম্ভু রায়ের বাড়ি।
সম্প্রতি পাশের জেলা কোচবিহারে এসে তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রত বক্সী নেতা-কর্মীদের জীবনযাপন নিয়ে সাবধান করেছিলেন। সিপিএমের ডালিম পাণ্ডেদের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, মানুষ সব নজর রাখছে। আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতায় শম্ভু রায়ের উত্থান সেই সাবধানবাণীকেই আরও এক বার মনে করিয়ে দিল। স্থানীয় লোকজন থেকে তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ বলছেন, বাবা ভ্যান চালাতেন। শম্ভু নিজেও প্রথম জীবনে আনাজ বেচতেন। তার থেকে চোখে পড়ার মতো উত্থান। এখন তাঁর দু’টি চার চাকা ও একটি দু’চাকার গাড়ি। মার্বেল পাথরে মোড়া বাড়ি।
তুষার বর্মণ খুনের পর থেকেই অবশ্য না খোঁজ আছে শম্ভুর, না তাঁর বাবার।
তপসিখাতায় মানুষের মুখে মুখে এখন একটাই আলোচনা, কী ভাবে ফুলেফেঁপে উঠলেন শম্ভু? স্থানীয়রা বলছেন, দক্ষিণ পাকুড়িতলা এলাকায় টিনের ছাপড়া ও বাঁশের বেড়ার ঘরেই বড় হন শম্ভু। আরএসপি কর্মী বলে পরিচিত তাঁর বাবা মটেশ্বর রায় ছিলেন ভ্যানচালক। প্রথম জীবনে শম্ভু আনাজ বেচতেন। কিন্তু এলাকায় পাওয়ার গ্রিডের কাজ শুরু হতেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় শম্ভুর। বালি-পাথর সরবরাহে নেমে রাতারাতি প্রচুর টাকা আয় করতে শুরু করেন তিনি। বাড়তে থাকে প্রভাব। তখনই শিবির বদলে শাসকদলের সান্নিধ্যে আসেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এলাকার আরএসপি-র এক নেতা দলবল নিয়ে শাসক দলে নাম লেখান। খুব শীঘ্রই আলিপুরদুয়ার-১ নম্বর ব্লক তো বটেই, তৃণমূলের জেলা রাজনীতিতেও নিজের জায়গা করে নেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটে ওই নেতার হয়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের এক রাজ্য শীর্ষ নেতাকেও। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই নেতার সঙ্গে শম্ভুর ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। বাড়ে দাপটও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বালি-পাথরের ব্যবসা থেকে আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই শম্ভুদের টিনের ছাপড়া ঘর বদলে যায় মার্বেলে মোড়া পাকা বাড়িতে। কংক্রিটের উঠোনে থাকা তুলসি মঞ্চও ঘেরা মার্বেল পাথরে। বাড়ির বারান্দায় বসানো টাইল। দু’টি চার চাকাও কেনেন শম্ভু, যার একটি আবার সেডান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শম্ভুর বাড়বৃদ্ধি এতটাই ছিল যে, পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের কেউ প্রার্থী দিতে পারেননি। ভোটের পরে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদ পান তিনি। দাপট আরও বাড়ে। দলের অন্দরেই অনেকে বলছেন, দাপুটে এক নেতার হাত বরাবর ছিল শম্ভুর মাথায়।
যদিও তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার-১ ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য মনোরঞ্জন দে বলেন, “এলাকায় যাঁরা তৃণমূল করেন তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের কাছের। ব্যক্তিগত জীবনে কারও উত্থানের সঙ্গে দলের কারও কোনও সম্পর্ক নেই।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মাও বলেন, “তপসিখাতার ঘটনার সঙ্গে দলের অন্য কোনও নেতার সম্পর্ক নেই।” তাঁদের দু’জনের কথাতেই এক সুর— ‘এই ঘটনার সঙ্গে অহেতুক আমাদের দলের নাম জড়ানো হচ্ছে।’
সকলেই যদি কাছের, তা হলে তুষারের বাড়িতে দলের কোনও শীর্ষ জেলা নেতাকে সে ভাবে যেতে দেখা গেল না কেন? তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “তুষারের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ থাকছে।” মনোরঞ্জনবাবুও বলেন, “খুব শীঘ্রই তুষারদের বাড়িতে যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy