Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বারুদের স্তূপে বাস, ভয়ে শিউরে উঠছে মাল্লাগুড়ি

দার্জিলিং মোড় লাগোয়া মাল্লাগুড়ির ঘন জনবসতিপূর্ণ বস্তি। পিছন দিকে সারি সারি বহুতল আবাসন। পাশেই চা নিলাম কেন্দ্র, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক, ওভারব্রিজ।

এই বাড়ি থেকেই বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে।

এই বাড়ি থেকেই বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share: Save:

দার্জিলিং মোড় লাগোয়া মাল্লাগুড়ির ঘন জনবসতিপূর্ণ বস্তি। পিছন দিকে সারি সারি বহুতল আবাসন। পাশেই চা নিলাম কেন্দ্র, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক, ওভারব্রিজ। বস্তির বাজারের এক পাশ দিয়ে রেললাইন এলাকাকে দু’ভাগ করে দিয়েছে। এলাকাটি বাসিন্দাদের কাছে অসম রেলগেট বলেই পরিচিত। রেলগেটে থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে বাড়ি বিজয় সুব্বার। সামনে লোহার সাটার দেওয়া বন্ধ রেশন দোকান। পিছনে সারি দিয়ে টিনের চালের পাকা ঘর।

দোকানের পাশ দিয়ে প্রায় ১০ ফুট সিঁড়ি নেমে গিয়েছে নীচের অন্ধকার গলিতে। দিনের আলো ঢোকারও উপায় নেই। অনেকটাই অন্ধকার বাঙ্কারের মতো। সেখানেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন প্রচুর বিস্ফোরক-সহ ধৃত দাওয়া শেরিং ভোটে এবং তার স্ত্রী পুজা। একমাত্র ঘরের খাটের নিচেই কার্পেট পিছিয়ে রাখা হয়েছিল, সারিসারি জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটর আর বিস্ফোরণের কর্ডেক্স তার। পুলিশ অভিযানের পরেও বাড়ির মালিক বিজয় সুব্বা, তাঁর স্ত্রী দয়মন্ত্রী সুব্বা তো বটেই এলাকার লোকজনই কল্পনা করতে পারছেন না, এই ভাবে বারুদের স্তূপের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছিলেন সকলে।

মাঝবয়সী দাওয়া বা পূজার সংসারের ঝামেলা, নতুন হোটেল খোলার পরিকল্পনা, ছেলেদের পড়ার খরচের জোগাড় শুনতে শুনতে কোনওদিন কেউ ভাবেননি, ওই দম্পতি মারণ অস্ত্র নিয়ে দিনের পর দিন বসে রয়েছেন এলাকায়। বিজয়বাবু বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরে দার্জিলিং মোড়ে হোটেল করত। মোমো, চাউমিন, মাংস-সহ সব মিলত। তিন মাস আগে ৩ হাজার টাকা নিয়ে ঘরও ভাড়া নেয়। নেপালের লোক। টাকা অগ্রিমও দেন। বয়স্ক দম্পতি কোনও কিছু সন্দেহই হয়নি। কে জানত, আমাদের ঘরের নিচতলায় বারুদ আর বারুদ। ভয়ে তো গায়ে এখনও কাটা দিচ্ছে। নথিপত্র না দেখাটা ভুল হয়েছে।’’

বিজয়বাবুর স্ত্রী জানান, ‘‘আমরা ঘর ভাড়া দেওয়ার সময় মুখের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। আমাদের বন্ধ রেশনোর দোকানও ভাড়া নিতে চেয়েছিল। ভ্যাগিস দিইনি। কিছু দিন ধরে হোটেলও করত না। তার পরেও ভালই ছিল। অনেক সময় ওই ব্যক্তি ঘরে তালা দিয়ে বাইরে চলে যেত। অন্য একটি মোমোর দোকানে মহিলা বসে খালি ঝগড়ার কথা বলত। এখন বুঝতে পারছি, আড়ালে কী চলছিল।’’

প্রধাননগর থানায় রাখা উদ্ধার করা বিস্ফোরক।

ছোট ঘর। একপাশে খাট, ফ্রিজ। তাতে রাখা রান্না করা আলুর সব্জি। পাশেই একাধিক শোকেস আর টেবিল, চেয়ার। হোটেলের থালা বাসনের মালপত্রের ঠাসা। ভিতরেই রান্নাঘর ও বাথরুম। খাটের নীচে খালি ঠান্ডা পানীয়ের ক্রেট। তার পিছনেই ছিল বিস্ফোরকের ব্যাগগুলি। এ দিন সকালে বিষয়টি চাউর হতেই এলাকার লোকজন সেখানে ভিড় করেন। বিজয় সুব্বার পাশেই কপিল শঙ্করের বাড়ি। তিনি একটি পানশালার কর্মী। কপিলের কথায়, ‘‘কোনও দিন সন্দেহই হয়নি। আমাদের কারও সঙ্গে খুব একটা কথাই বলেনি।’’ ওই বাড়ির আরেক পাশে মুদির দোকান। মালিক সৈইফুর নেশা বলেন, ‘‘দোকানের ১০০ ফুটের মধ্যে ঘর। কোনওদিন দোকানে আসেনি। কী ভয়ানক ভাবতেই পারছি না।’’

পিছনের এলাকার থাকায় সুজয় মণ্ডল, বিজয় রায়’রা। তাঁরা জানান, কয়েক বছর আগে প্রধাননগরে আরেকটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল। নেপালের লোক ছিল। বেশি টাকার জন্য এভাবে নথি না দেখে ঘরভাড়া দেওয়াটা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনকে বিষয়টি দেখা দরকার।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘কী হচ্ছে শিলিগুড়িতে! বিস্ফোরক, সাপের বিষ, সোনা, অস্ত্র কিছুই বাদ নেই। আর কে কোথায় থাকছে, কী করছে পুলিশ পরে জানছে।’’ একক ভাবে স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রোজ এলাকার নতুন লোক ঢুকছে। আমরা বাড়ির মালিকদের বোঝাচ্ছি। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ingredients mallaguri Explosive
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE