Advertisement
০৪ মে ২০২৪
মাটি খুঁড়ে মিলল দেহ

স্ত্রীকে খুন করে নিখোঁজ ডায়েরি

স্ত্রী হারিয়ে গিয়েছে বলে তিনি থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন। পুলিশের কাছে গিয়ে বারবার খোঁজখবরও করেছেন।

সীমা বর্মন

সীমা বর্মন

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০২:২১
Share: Save:

স্ত্রী হারিয়ে গিয়েছে বলে তিনি থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন। পুলিশের কাছে গিয়ে বারবার খোঁজখবরও করেছেন। স্ত্রীর মোবাইলের কলরেকর্ড বার করে দেখার জন্যও পুলিশকে বলেছিলেন মাটিগাড়ার ঘোকলাজোতের বাসিন্দা পেশায় ট্রাক চালক অখিল বর্মন। এমনকী, পেশায় বিউটিশিয়ান স্ত্রী হয়তো কারও সঙ্গে পালিয়েছেন বলে তাঁর সন্দেহ হচ্ছে, সে কথাও তিনি পুলিশকে জানান। তার পরে শাশুড়িকে টেলিফোন করে বিহার থেকে ডাকিয়ে এনে সব্জি বাজার করে বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থাও করেন।

কেউ টেরই পাননি, বাড়ির শৌচাগারের পাশের অংশে মাটিতে পোঁতা রয়েছে, অখিলবাবুর স্ত্রীর দেহ। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ি থেকে পচা গন্ধ বেরোতেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। লোকজন পুলিশে খবরও দেন। কয়েক ফুট মাটি খুঁড়ে পচাগলা দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। মাটিগাড়া থানার ঘোকলাজোত এলাকার ঘটনা। তবে তার আগেই বেগতিক বুঝে স্ত্রীর স্কুটি নিয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত অখিল।

অভিযুক্ত একাই ওই কাজ করেছে না, তাঁকে কেউ সাহায্য করেছিলেন, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্তের মোবাইলের তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, শ্বাসরোধ করে ওই মহিলাকে খুন করা হতে পারে। মিসিং ডায়েরি হওয়ার কত ক্ষণ আগে খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই স্পষ্ট হবে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে খুনের কারণ জানা যাবে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম সীমা বর্মন (৩৬)। সীমাদেবীর বাপের বাড়ি বিহারে পটনায়। সীমাদেবীর প্রথম পক্ষের বিয়েতে ১৮ বছরের একটি ছেলে ও ১৫ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলে শুভম বিহারে দাদুর বাড়িতেই থাকে। মেয়ে সিমরন বাগডোগরার একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্তু মাস খানেক ধরে মেয়েও দাদুর বাড়িতে রয়েছে। অখিল ভিন রাজ্যের ট্রাক চালাতেন। মেঘালয়ে গিয়ে সীমাদেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। বছর দশেক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। পরে মাটিগাড়ার এসে জমি কিনে বাড়ি করেন। এই এলাকায় তাঁদের আত্মীয়স্বজন নেই। সীমাদেবীর ছেলে শুভমই সৎ বাবার বিরুদ্ধে মা’কে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ঠিক কী কারণে খুন, তা পুলিশ এখনও জানতে পারেনি। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, তৃতীয় কোনও সম্পর্কের জেরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল চলছিল কি না, তা পুলিশ দেখছে। নিহতের মা মীনাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হত। তা বলে খুনের ঘটনা ভাবাই যায় না।

মাটিগাড়া খাপরাইল মোড়ের আগে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ডান হাত ধরে এগিয়ে গেলেই ঘোকলাজোত। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩০ মে বিকালে অভিযুক্ত অখিল থানায় মিসিং ডায়েরি করান।

ডায়েরিতে অখিল জানান, ওই দিন ভোর সাড়ে ৪টা থেকে তিনি স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। দরজা খোলা ছিল। পুলিশ অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে। পরের দিন, বিকালে তাঁর শাশুড়ি ও সৎ ছেলে বিহার থেকে যান। রাতে সকলে ওই বাড়িতেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্গন্ধ বার হয়। মীনাদেবী বাড়ির ভিতরে শৌচালয়ের পাশের কংক্রিটের একটি অংশের মাটি বসে যেতে দেখেন। সেখান থেকে দুর্গন্ধ বেশি বার হচ্ছিল। লোকজন পুলিশে খবর দেন। সেই সময় অবশ্য অভিযুক্ত বাড়িতে ছিলেন না। পরে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রফুল্ল বর্মন বলেন, ‘‘স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে লোকজনকে ওই ব্যক্তি বলছিলেন। তবে উনিই যে এই কান্ড করেছেন, কেউ টেরই পায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wife missing Husband
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE