Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অল্প কথা, সঙ্গে টাকা, কাগজে মোড়া বোতল হাজির নিমেষে

ধূপগুড়ি চৌপথিতে এই দৃশ্য নতুন নয়। অভিযোগ, বেআইনি মদের এই রমরমা বহুদিনের। অথচ ঢিলছোড়া দূরত্বেই ট্র্যাফিক পোস্ট। দিনরাত সেখানে পুলিশের আনাগোনা। বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুলিশ মাঝেমধ্যে দোকানগুলিতে অভিযান চালিয়ে মদের বোতল বাজেয়াপ্ত করে।

আড়ালে: হোটেলের কোণায় মদের বোতল ও থলে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

আড়ালে: হোটেলের কোণায় মদের বোতল ও থলে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

অর্ণব সাহা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

দোকানের সামনে হোটেলের সাইনবোর্ড। সামনে চেয়ার পেতে বসে সত্তর ছুঁই ছুঁই এক ব্যক্তি।

সানগ্লাসটা কপালে তুলে বুকের বোতাম খোলা শার্টের বছর সতেরোর কিশোর হোটেলের সামনে এসে দাঁড়াতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে ওই বৃদ্ধ জানতে চাইলেন, ‘‘বাবু কী লাগবে, এ দিকে আসেন।’’ কথাবার্তায় বোঝা গেল ওই কিশোর বাইরে থেকে এসেছে। এরপর মিনিট দু’য়েক দুজনের মধ্যে কথাবার্তা চলল, হল টাকার বিনিময়। তারপর ওই কিশোরকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে সোজা হোটেলের ভিতরে ঢুকে গেলেন ওই প্রৌঢ়। পরক্ষণেই তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে খবরের কাগজে মোড়ানো মদের বোতল এনে হাতে ধরালেন ওই কিশোরের।

ধূপগুড়ি চৌপথিতে এই দৃশ্য নতুন নয়। অভিযোগ, বেআইনি মদের এই রমরমা বহুদিনের। অথচ ঢিলছোড়া দূরত্বেই ট্র্যাফিক পোস্ট। দিনরাত সেখানে পুলিশের আনাগোনা। বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুলিশ মাঝেমধ্যে দোকানগুলিতে অভিযান চালিয়ে মদের বোতল বাজেয়াপ্ত করে। দোকানিদেরও অনেক সময় আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু প্রভাবশালীদের ফোন পেলেই ছেড়ে দেয়। ফলে পরিস্থিতি আবার যে কে সেই হয়ে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধে নামলেই ধূপগুড়ির বিভিন্ন জায়গার চপের দোকান, স্টেশনারি দোকান, ভাতের হোটেল, জাতীয় সড়কের পাশে রমরমিয়ে চলে মদের কারবার। কোনও ঠেকে আবার প্লাস্টিক বিছিয়ে রীতিমতো বারের কায়দায় বসে মদ্যপদের আড্ডা। ধূপগুড়ি চৌপথির কাছে দু-তিনটি ভাতের হোটেলেও মদের আড্ডা চলে বলে অভিযোগ। এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের আক্ষেপ, ‘‘সূর্য ডুবলে ওই এলাকা দিয়ে হাঁটাচলা করাই দায় হয়ে পড়ে। প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি।’’

আবগারি দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, উদ্বেগের বিষয় হল, ওই হোটেল বা দোকানগুলি কিন্তু সরকার-নির্দিষ্ট কোনও জায়গা থেকে মদ কেনে না। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদের আশঙ্কা। সম্প্রতি শান্তিপুর ও ফাঁসিদেওয়ার পরে বেআইনি মদ খেয়ে মৃত্যুর সেই আশঙ্কাও বেড়েছে। হুবহু আসলের মতো বোতল, লেবেল, ছিপি। চোখে দেখে আসল-নকল ফারাক করে সাধ্যি! আনাচে-কানাচে বেআইনি এই মদের দোকানগুলির খদ্দের মূলত কম আয়ের মানুষজন। অভিযোগ, রিকশা, ভ্যান বা টোটো চালক, রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়া বা দিনমজুরি খাটা লোকজনের একাংশ সন্ধ্যার পর নেশার টানে এই সব ঠেকের দিকে পা বাড়ান। সারাদিনের আয়ের সিংহভাগটাই চলে যায় মদের ঠেকে। তারপর বাড়ি ফিরে অনটনের সংসারে নিত্য অশান্তি লেগেই থাকে। ঠাকুরপাটের এক মহিলা বললেন, ‘‘স্বামী শহরে রিকশা চালিয়ে আয় করে। কিন্তু সে টাকা বাড়িতে আনে না। সবই উড়িয়ে দেয় ঠেকে।’’

ধূপগুড়ি ব্লকে পনেরোটি মদের দোকানের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু অনুমোদিত দোকানের থেকে বেআইনি মদের ঠেকের সংখ্যা অনেক বেশি। আবগারি দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। আমাদের নজর রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই ওই ঠেকগুলিতে হামলা চালানো হয়।’’ জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির আশ্বাস, ‘‘বেআইনি মদের রমরমা ঠেকাতে আমরা তৎপর।’’ বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, সেই তৎপরতা তেমনভাবে চোখে পড়ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Foreign Liquor Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE