নাগরিক কনভেনশনে নির্দল প্রার্থী গৌতম বড়ুয়া। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
কোচবিহারে পুরবোর্ড গঠনে তৃণমূলকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিলেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর গৌতম বড়ুয়া। রবিবার সন্ধ্যায় শহরের বক্সিবাড়ি এলাকায় নাগরিক কনভেনশন ডেকে পুরবোর্ড গঠনের ভূমিকা কী হবে সে ব্যাপারে বাসিন্দাদের মতামত নেন তিনি। ওই কনভেনশনে বেশিরভাগ বক্তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁকে শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার পক্ষে সওয়াল করেন।
গৌতমবাবু বলেন, “নাগরিক কনভেনশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনিক স্তরে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন তাঁদের পক্ষে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে জানিয়েছেন। মানুষের মতামতকেই প্রধান্য দেব। তা ছাড়া আমি ডানপন্থী ঘরানার। বামফ্রন্টকে সমর্থনের প্রশ্নই নেই। তৃণমূলের তরফে সমর্থন চেয়ে কেউ অবশ্য এখনও প্রস্তাব পাঠাননি। প্রস্তাব এলে যা জানানোর জানিয়ে দেব।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ গৌতমবাবুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।” কোচবিহারে পুরবোর্ড গঠনে নির্দলদের সমর্থন চেয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠান হয়েছে বলেও এদিন দাবি করেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে যারা ক্ষমতায় আছে সেই দলকেই ভোট দিলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে প্রচার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এমনকী, দলীয় প্রার্থীদের সরকারি প্রার্থী বলে মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনে এই ব্যাপারে অভিযোগও করা হয়েছিল। কমিশন তখন তাঁকে সতর্ক করে।
কোচবিহার পুরসভার ২০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১০টিতে, বামেরা ৮টিতে ও নির্দল প্রার্থীরা ২টি আসনে জয়ী হয়েছেন। জয়ী নির্দলদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গৌতমবাবু ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শম্পা রায়। এবার পুরবোর্ড গঠনে ওই দুই নির্দল প্রার্থীর সমর্থন পাওয়ার জন্য তৃণমূলের অন্দরে তৎপরতা ছিলই। গৌতমবাবুর এদিনের নাগরিক কনভেনশনের জন-রায় কোন দিকে যাবে তা নিয়ে তাই উদ্বেগে ছিলেন দলের শীর্ষ জেলা নেতাদের অনেকেই। শেষপর্যন্ত গৌতমবাবু পুরবোর্ড গঠনে বামেদের সমর্থন করবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ বার শম্পাদেবী কী ভূমিকা নেন, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলের আগ্রহ বেড়েছে। শম্পাদেবীর আত্মীয় তথা ভোট যুদ্ধের সেনাপতি প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর উত্তম রায় বলেন, “তৃণমূলের তরফে বোর্ড গঠনে সমর্থন চাওয়া হয়নি। নাগরিক সভা করে পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।”
গৌতমবাবু কোন পক্ষকে সমর্থন করবেন সেই প্রশ্নে রবিবার বক্সিবাড়ি এলাকায় রীতিমতো মঞ্চ করে ওই নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। নাগরিকদের ভিড় সভায় ছিল নজরকাড়া। ব্যবসায়ী সেবাব্রত দত্ত বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হলে কাজ আদায় করা সম্ভব।” দেবাশিস রায় বলেন, “কাজের সুবিধের জন্য প্রশাসনের দরকার আছে।” মুকুল সরকার সভায় জানান, প্রশাসনের ক্ষমতা যেদিকে সেদিকে থাকলে দাবি আদায় করা সহজ হয়। ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিষ্ণুপদ মুখোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল আচার্য, শিক্ষক সুবোধ সরকাররাও সভায় বক্তব্য রাখেন। সরাসরি কাজের মানুষ হিসাবে গৌতমবাবুর প্রশংসা করলেও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে তাঁরা কোনও পরামর্শ দিতে চাননি। ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ভার গৌতমবাবুর ওপরেই সরাসরি ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও বেশ কয়েকজন জানিয়ে দেন।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় অবশ্য গৌতমবাবু সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, “উনি তো আগে তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন। টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে লড়েছিলেন। ফলে ওঁকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে কোন প্রত্যাশা করা হয়নি। উনি নিজে যদি কখনও তৃণমূলে অপমানিত হয়েছেন জানিয়ে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে আমাদের সঙ্গে থাকার কথা বলেন, তখন আলোচনা হতে পারে।” গৌতমবাবু ও প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর উত্তম রায় প্রয়াত পুর চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডুর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। দুই শিবিরেরই দাবি, বীরেনবাবুর সঙ্গেই তাঁরাও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের টিকিটে গত পুরভোটে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী গৌতমবাবুর বদলে এবার প্রবাল গোস্বামীকে টিকিট দেয় তৃণমূল। উত্তমবাবুরাও ১৫ নম্বরে তৃণমূল তাঁদের প্রার্থী করবে না বলে খবর পেয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নেন বলে দাবি করেছেন। উত্তমবাবুর বৌদি শম্পা রায় তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা রানা বসুর স্ত্রী অন্তর বসুকে হারিয়ে জয়ী হন। ওই পরাজয় নিয়ে দলের অন্দরে অন্তর্ঘাতের অভিযোগও তোলেন রানাবাবুর অনুগামীরা। গৌতমবাবুকেও প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy