বর্ষায় তিস্তা ক্রমশ ‘ভয়ঙ্কর’ হচ্ছে। সিকিম থেকে নেমে আসা এই নদী এখন নিজের খাত ছেড়ে কোথাও ডানদিক, কোথাও বাঁদিক দিয়ে বইছে। তাতেই বিপদে পড়েছে সেচ দফতর। তিস্তা নদী বাঁধের পরের পর স্পারের ক্ষতি হয়ে চলেছে। স্পারের মাথা ভাঙছে, দেওয়াল ধসে যাচ্ছে। যদিও জল বেশি থাকায় সেগুলি মেরামত করতে পারছে না সেচ দফতর। এ দিকে শুক্র-শনিবারে উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তায় জলের পরিমাণ এখনও বিপদসীমার কাছাকাছি। সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “পরিস্থিতি খারাপই আছে। তিস্তাকে সামলানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী নিজের খাত ছেড়ে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। অর্থাৎ নদীর যেখান দিয়ে বয়ে যাওয়ার কথা সেখানে জল কম, কিন্তু যেখানে গ্রাম সেদিকেই নদী সরে যাচ্ছে।”
গত বছর সিকিমে বিপর্যয়ের পরে তিস্তা নদী গতিপথ বদলেছে। তার পর থেকেই নদীতে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন নদীখাত উঁচু হয়ে যাওয়া। তার ফলেও এ বারের বর্ষায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে সেচ দফতরকে। ভরা তিস্তাতেও কিছু কিছু এলাকায় নদীর মাঝে সবুজ চর জেগে উঠেছে। সেই এলাকায় নদী সরে চলে গিয়েছে পাশে, ভাসিয়ে দিয়েছে জনপদ। সেবক লাগোয়া লালটং বস্তিকে যেমন রক্ষা করা যাবে কিনা
তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। সেবকের কাছে লালটং বস্তি এলাকায় নদী ডান দিকে সরেছে। জনপদে ঢুকে পড়েছে তিস্তার জল।
ময়নাগুড়ির বাকালিতেও তিস্তা নিজের খাত ছেড়ে সরেছে ডান দিকে। ভাসিয়ে দিয়েছে গ্রাম। দক্ষিণ চেংমারিতে তিস্তা বাঁদিকে সরে গিয়েছে অনেকটা। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মিলনপল্লির বীরেন বস্তি এলাকাতেও তিস্তা নদী ডান দিক দিকে সরে জনপদে ঢুকে পড়েছে। মুখ্য বাস্তুকার বলেন, “তিস্তা দিয়ে প্রবল বেগে জল বইছে। জলের পরিমাণও অত্যন্ত বেশি। সে কারণে এক দিনে যতটুকু ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা যেত, সেটি করতে এখন চারদিন লাগছে। সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও কাজে সমস্যা করেছে। তবু লালটঙে নদীতে ব্যারিকেড বসিয়ে জনপদ রক্ষা করার মতো চেষ্টা চলছে। তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙাতেও একাধিক নদীতে ভাঙন চলছে।”
সেচ দফতর সূত্রে খবর, রবিবারও জলপাইগুড়ি লাগোয়া দোমহানীতে তিস্তায় ‘হলুদ সতর্কতা’ ছিল। মেখলিগঞ্জে ‘লাল সতর্কতা’ রয়েছে। জলঢাকা নদীতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ‘লাল সতর্কতা’। গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়িতে ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দোমহানীতেও ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পুর্বাভাস আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে, মঙ্গলবার রাত থেকে ফের বৃষ্টি বাড়বে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)