Advertisement
০৩ মে ২০২৪
বেলাগাম ট্রাকে পিষে মৃত ৪

জামাইষষ্ঠীর আনন্দ বদলে গেল কান্নায়

উৎসবের আমেজ বদলে গেল কান্নার রোলে। সকালটা শুরু হয়েছিল জামাইষষ্ঠীর আয়োজনের কথা ভেবেই। কিন্তু দিনের শেষে পুরো পরিবার শোকাচ্ছন্ন। শোক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকাতেই। ওই এলাকায় কোনও বাড়িতেই এ দিন আনন্দের সঙ্গে জামাইষষ্ঠীর আয়োজন করা যায়নি।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৭:২৮
Share: Save:

উৎসবের আমেজ বদলে গেল কান্নার রোলে।

সকালটা শুরু হয়েছিল জামাইষষ্ঠীর আয়োজনের কথা ভেবেই। কিন্তু দিনের শেষে পুরো পরিবার শোকাচ্ছন্ন। শোক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকাতেই। ওই এলাকায় কোনও বাড়িতেই এ দিন আনন্দের সঙ্গে জামাইষষ্ঠীর আয়োজন করা যায়নি।

শুক্রবার ভোরে গাজলের ময়নায় ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে একই পরিবারের দুই শিশু সহ চার জনের মৃত্যুর খবরটিও ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। তখনই শোকে ভারি হয় বাতাস। ময়নাতদন্ত শেষে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃতদেহগুলি যখন বিকেল পাঁচটায় ময়নার দাস বাড়ির দাওয়ায় পৌঁছয়, তখন ওই পরিবার ও পাড়ার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার বুকফাটা কান্না কেউ ঠেকাতে পারেনি। এ দিনই সন্ধ্যায় ময়নার শ্মশানে চারটি চিতা যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল তখন, সেখানে হাজির ছিলেন হাজারেরও বেশি নির্বাক ময়নাবাসী। ঘনঘন মূর্চ্ছা গিয়েছেন বাড়ির মেয়েরা।

এই এলাকাতে বিভিন্ন পার্বণে পুকুরের মাছ ধরেই খাওয়া-দাওয়ার রেওয়াজ। গাজোল ব্লকের ময়নার দাস পরিবারও তেমনই ভেবছিলেন। শুক্রবার ছিল জামাইষষ্ঠী, তাই এ দিন ভোরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের পুকুরে চলছিল মাছ ধরার পালা। জেলেরা মাছ ধরছিল। বাড়ির বড়োদের সঙ্গে ছোটরাও সে সময় পুকুরপাড়ে হাজির ছিল। দাস পরিবারের বড়ো ভাই বিষ্ণু দাস সহ ভাই নিতাই, কৃষ্ণ, সুশান্ত এবং তাঁদের ছোট ছেলেমেয়েরা ছিল। কিন্তু ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তেলের পাউচ বোঝাই রায়গঞ্জগামী একটি ট্রাক আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরপাড়ে বসে থাকা পাঁচ সদস্যকে চাপা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে সেই পুকুরেই পড়ে যায়। ওই পাঁচ জনের আর্ত চিৎকারে সেখানে থাকা পরিবারের অন্যরা, জেলেরা ও আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরাই ওই পাঁচ জনকে উদ্ধার করে গাজোল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিন জনকে ওই হাসপাতালেই মৃত বলে ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। বাকি দুজনকে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই আরও একজন মারা যান। অপরজনকে মালদহের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। বিষ্ণুবাবুর মামাতুতো ভাই বিশ্বজিত দাস বলেন, ‘‘বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর উৎসব থাকাতেই এদিন পুকুরের মাছ ধরা চলছিল। বড় বড় মাছ বাড়ির জন্য রেখে বাকি মাছ বিক্রি করা হত। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’’

পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই ময়নার দাস পরিবারে কান্নার রোল শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে, স্বামী বিষ্ণুবাবু ও ১১ বছরের মেয়ে স্মৃতিকে হারিয়ে বারবারই মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন ষষ্ঠীদেবী। দিনভর তাঁকে সামাল দিতেই হিমসিম খেতে হয় পরিজনদের। এ ছাড়া কলেজের গণ্ডি পেরোনো ছেলে প্রবীরকে হারিয়ে নিতাইবাবু ও ১০ বছরের মেয়ে সন্দিতাকে হারিয়েও কৃষ্ণবাবুও বারবার জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলেই তাঁরা বলছিলেন, ‘‘সব শেষ হয়ে গেল। ট্রাক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’ এ দিকে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল পাঁচটা নাগাদ চারটি মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যেতেই কান্নার রোল আরও বেড়ে যায়। সে সময় বাড়িতে উপচে পড়েছিল গ্রামের মানুষের ভিড়। তাঁদেরও চোখের কোন জলে ভিজে যায়। সেই ভিড় চলে যায় ময়নার শ্মশানেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jamaisasthi accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE