মহাত্মা গান্ধীর বদলে ‘পূজ্য বাপু’ নয়। ১০০ দিনের কাজের আইন বলে পরিচিত মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) আইন থেকে মহাত্মা গান্ধীর নামের চিহ্নই পুরোপুরি মুছে দিচ্ছে মোদী সরকার। তার বদলে নরেন্দ্র মোদী এই আইনে ‘বিকশিত ভারত’-এর সঙ্গে ‘রাম’-এর ছোঁয়ালাগাতে চাইছেন।
গত সপ্তাহে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি আইনের নাম বদলে পূজ্য বাপু গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি আইন করা হোক। আজ মোদী সরকার সাংসদদের কাছে যে বিলের খসড়া পাঠিয়েছে, তাতে নতুন বিলের নাম করা হয়েছে, ‘বিকশিত ভারত গ্রামীণ রোজগার ও অজীবিকা মিশন গ্যারান্টি’ ওরফে ভিবি-জি রাম জি’ বিল। নামকরণ থেকেই স্পষ্ট, বিলের মধ্যে ‘রাম’ নিয়ে আসার জন্যই শব্দ সাজানো হয়েছে।
ইউপিএ সরকারের আমলে তৈরি রোজগার নিশ্চয়তা আইনের খোলনলচে পাল্টে মোদী সরকার ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তার বদলে একে ১২৫ দিনের কাজের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করতে চাইছে। কিন্তু কোন রাজ্যে কত অর্থ বরাদ্দ হবে, তা ঠিক করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছে। রাজ্যের প্রস্তাবের বদলে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের মাপকাঠি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করবে। ফলে আইনে রোজগারের নিশ্চয়তা আর থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এত দিন আইনে কাজ চাইলে কাজ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। গ্রামে কাজের চাহিদা অনুমান করে রাজ্য কেন্দ্রের কাছে টাকা চাইত। এখন দিল্লি থেকে অর্থ বরাদ্দ করে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, মোদী সরকার কাজের গ্যারান্টির দিন বাড়ানোর কৃতিত্ব নিলেও রাজ্য সরকারের ঘাড়ে মজুরির খরচের শতকরা ৪০ ভাগের দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের প্রধান শরিক তেলুগু দেশমও আশঙ্কা জানিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশমের সরকার মনে করছে, রাজ্যের উপরে আর্থিক চাপ বাড়বে।
সোমবার দুপুরে আচমকাই লোকসভায় অতিরিক্ত কার্যসূচির তালিকা নিয়ে এসে মোদী সরকার জানায়, এই বিল লোকসভায় পেশ হতে চলেছে। কিন্তু লোকসভার কার্যসূচি উপদেষ্টা কমিটিতে এই বিল নিয়ে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীরা আপত্তি জানায়। বিশেষত মহাত্মা গান্ধীর নাম মোছা নিয়ে বিরোধীরা আপত্তি তোলে। কংগ্রেস অভিযোগ তোলে, আরএসএসের শতবর্ষে বিজেপি মহাত্মা গান্ধীকে অপমান করছে। তৃণমূলের তরফে কাকলি ঘোষ দস্তিদার নাম বদলের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে টাকা আটকে রাখা নিয়ে আপত্তি তোলেন। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য লোকসভায় এই বিল পেশ হয়নি। মঙ্গলবার তা পেশ করা হবে। তবে সূত্রের খবর, বিরোধী শিবির, বিশেষত শরিকদের আপত্তির কথা মাথায় রেখে ভিবি-জি রাম জি বিল সংসদীয়স্থায়ী কমিটিতে পাঠাতে সম্মত হয়েছে মোদী সরকার।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে ১৯টি জেলার মনরেগা-য় দুর্নীতি এই আইনে বদলের প্রধান কারণ। আর্থিক নয়ছয়, নিয়ম লঙ্ঘন, বিনা কাজে টাকা বরাদ্দের ফলে পশ্চিমবঙ্গকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের চুরি রোখা আইন বদলের প্রধান কারণ। তা ছাড়া ২০০৫-এ এইরোজগার নিশ্চয়তা আইন তৈরি হয়েছিল। তার পরে গ্রামের অর্থনীতি বদলে গিয়েছে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে জল সরবরাহ নিশ্চিত করা,জীবিকা সংক্রান্ত স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে আইনে বদল হচ্ছে। বিকশিত ভারতের লক্ষ্যমাত্রাঅনুযায়ী পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে সেই ভাবে বিলের নামকরণ হয়েছে। চাষআবাদের সময় যাতে খেতমজুরের অভাব না হয় এবং খেতমজুরির হার বেড়ে না যায়, সে কারণে বিলে বলা হয়েছে, বছরে মোট দু’মাস রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পের কাজ বন্ধরাখা যাবে।
মনরেগা-কর্মীদের জাতীয় সংগঠন এনআরইজিএ সংঘর্ষ মোর্চার অভিযোগ, এত দিন চাহিদার ভিত্তিতে কাজ মিলত। এখন টাকার জোগানের ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হবে। ফলে বাস্তবে রোজগারের নিশ্চয়তা থাকবে না। প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়ে এই আইন তৈরিতে সিপিএম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সিপিএম আজ এই ভিবি-জি রাম জি বিল প্রত্যাহারেরদাবি জানিয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)