চাঁচলে পাট শুকোচ্ছেন চাষিরা। —নিজস্ব চিত্র।
বিঘা প্রতি চাষের খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি সরকারি সহায়ক মূল্য। আবার ফড়েদের দাপটে মিলছেনা ন্যায্য দামও। তাই মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পাট চাষ করে রীতিমত বেকায়দায় মালদহের চাঁচল মহকুমার পাট চাষিরা। বর্তমানে যে দরে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে তাতে লাভ দূরের কথা, খরচ তুলতেই চাষিদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাটের সরকারি সহায়ক মূল্য বাড়ানোর দাবিতে এরমধ্যেই সরব হয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। সমস্যা না মিটলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে তারা।
চাঁচলের মহকুমা কৃষি আধিকারিক জয়ন্ত দাস বলেন,“পাটের সরকারি সহায়ক দাম কত হবে তা আমাদের এক্তিয়ারভূক্ত নয়। তবে বাজারে ফড়েদের দাপটে যে চাষিদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, সেই বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। বেশি লাভের আশায় ফড়েরা কম দামেই পাট কিনছে। অভাবের কারণে চাষিরাও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।” মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল মহকুমার ছ’টি ব্লকে এই বছর ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এই এলাকায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হল পাট। প্রতি বছর পুজোর আগে পাট ওঠে। ফলে চাষীদের ঘরে পুজোর আনন্দও নির্ভর করে পাট চাষের লাভ-ক্ষতির উপরে।
কৃষি দফতর ও পাটচাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিড়ানি থেকে শুরু করে বহন, আগের তুলনায় পাট চাষের খরচ বেড়েছে অনেকটাই। বিঘা প্রতি পাট চাষে খরচ হচ্ছে চার হাজার টাকা। এক বিঘায় গড়ে পাট উৎপাদিত হচ্ছে চার কুইন্টাল। কুইন্টাল প্রতি এখন পাটের দাম মিলছে ২২০০-২৩০০ টাকা। ফলে বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা খরচ করে মিলছে বড়জোর ৪৬০০ টাকা। তাতে ঋণের টাকা শোধ করতেই নাভিশ্বাস উঠছে চাষিদের। পাটের সহায়ক দাম তাই ক্যুইন্টাল প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করার দাবি তুলেছে কৃষক সংগঠনগুলি। হরিশ্চন্দ্রপুরের সাহাপুরের বাসিন্দা পাটচাষি হবিবুর রহমান বলেন, “পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাজারে গেলে ফড়েদের কাছে শুনতে হচ্ছে যে পাটের আর চাহিদা নেই। তাই তাদের মর্জিমতো দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।” চাঁচলের চাষি বলরাম মন্ডল বলেন, “জেসিআইতে সবথেকে ভালো পাটের দাম ২৪০০ টাকা ক্যুইন্টাল। ফলে গড়পরতা যে পাট উৎপাদিত হয় তার দাম জেসিআইতে বাজারের থেকেও কম। তা হলে চাষিরা যাবে কেন।” যদিও জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার মালদহের রিজিওনাল ম্যানেজার নবকুমার মজুমদার বলেন, “আমাদের সর্বোচ্চ সহায়ক মূল্য ২৪০০ টাকা! বাজারে তার থেকে বেশি দাম মিলছে বলে চাষিরা আমাদের কাছে আসছেন না। আমরা তো দাম বাড়াতে পারি না। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়।” সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারাভারত কৃষক সভার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের সভাপতি তথা মালদহ জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ শেখ খলিল বলেন, “পাটের সহায়ক দাম যাতে বাড়ে সেটা রাজ্য সরকারকেই দেখতে হবে। না হলে চাষিদের পথে বসতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy