Advertisement
E-Paper

ভোটে খুশি, প্রশাসনকে ধন্যবাদ বিরোধীদের

নির্বাচনের দিন তৃণমূল কংগ্রেস বহিরাগত দুষ্কৃতীদের পুর এলাকায় ঢুকিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুথজ্যাম, ছাপ্পাভোট, বিরোধীদের উপর হামলা সহ নানা ভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে পুরসভা দখলের চেষ্টা করতে পারে বলে আগেই অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। নির্বাচনের একদিন আগে শুক্রবারও এই আশঙ্কার কথা পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি।

গৌর আচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৪
কালিয়াগঞ্জে একটি বুথে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণবীর কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

কালিয়াগঞ্জে একটি বুথে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণবীর কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচনের দিন তৃণমূল কংগ্রেস বহিরাগত দুষ্কৃতীদের পুর এলাকায় ঢুকিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুথজ্যাম, ছাপ্পাভোট, বিরোধীদের উপর হামলা সহ নানা ভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে পুরসভা দখলের চেষ্টা করতে পারে বলে আগেই অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। নির্বাচনের একদিন আগে শুক্রবারও এই আশঙ্কার কথা পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি। সেই সঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির তরফে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাইক বাহিনী নিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ জানানো হয়। এতদসত্ত্বেও শনিবার কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডে নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হয়েছে। কারণ হিসেবে নিজেদের অবস্থান বদল করে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি-র তরফে পুলিশ ও প্রশাসনের কৃতিত্বকে তুলে ধরা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা, তৎপরতা ছাড়া অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হওয়া সম্ভব ছিল না। সেই সঙ্গে, নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হওয়ায় বিরোধী দলগুলির তরফে বাসিন্দাদেরও অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণধীরকুমার ও পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার দাবি, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থক, প্রার্থী, নির্বাচনকর্মী, পুলিশ, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুরে নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হয়েছে।’’

কিছু দিন আগে রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি একাধিক নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আশঙ্কা করেছিলেন, নির্বাচনের দিন তৃণমূল কালিয়াগঞ্জে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে পুরসভা দখল করতে পারে। শাসক দলের চাপে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করে নির্বিঘ্নে নির্বাচন শেষ করাতে পারবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এরপর গত শুক্রবার সিপিএমের কালিয়াগঞ্জ জোনাল সম্পাদক দেবব্রত সরকার, পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী অরুণ দে সরকার ও কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায়, বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী পৃথক ভাবে কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত কালিয়াগঞ্জের পর্যবেক্ষক দীপঙ্কর মন্ডলের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, নির্বাচন চলাকালীন তৃণমূল বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দিয়ে শহরের একাধিক ওয়ার্ডে বুথজ্যাম, ছাপ্পাভোট, বিরোধীদের উপর হামলা সহ নানাভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে পুরসভা দখলের চেষ্টা করতে পারে। সেই সঙ্গে, ওই দিন কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির তরফে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কাছে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাইক বাহিনী নিয়ে তান্ডব চালিয়ে বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ জানানো হয়। এত আশঙ্কা ও অভিযোগের পরেও এদিন একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া কালিয়াগঞ্জ পুরসভা নির্বাচন নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ায় কার্যত অবাক হয়ে যান কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি নেতারা।

রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দীপাদেবী দিল্লিতে রয়েছেন। এদিন তিনি ফোন ধরেননি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত এদিন দাবি করেন, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা ও বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটদানের মনোভাবের জেরেও কালিয়াগঞ্জ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এলাকাগুলিতে জড়ো হয়েও সন্ত্রাস চালানোর সাহস পায়নি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের মতে, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ পদক্ষেপ ও বাসিন্দারা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকায় শাসক দল শেষ মূহূর্তে গোলমাল করতে ব্যর্থ হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শাসক দলের চাপে পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে নির্বিঘ্নে নির্বাচন শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে আমদের সংশয় থাকলেও এদিন পুলিশ ও প্রশাসনের অতি সক্রিয়তায় নির্বিঘ্নে নির্বাচন শেষ হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনকে দলের তরফে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, তাঁরা প্রথম থেকেই বলে আসছেন, কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি রামধনু জোট করে কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর পুরসভা দখল করার স্বার্থে বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করতে তৃণমূল, পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার করছে! তাঁর কটাক্ষ, ‘‘নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হওয়ায় এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ও প্রশাসনকে কৃতিত্ব দেওয়া ছাড়া বিরোধী দলগুলির অন্য কোনও রাস্তা নেই।’’

এদিন সকালে ভোট চলাকালীন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী মায়া দে সরকার সহ কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে দুপক্ষকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। একই সময়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বুথে একটি ইভিএম মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এক ঘন্টা নির্বাচন বন্ধ থাকে।

kaliaganj opponents kaliganj bjp kaliaganj municipality election 2015 kaliaganj administration gour acharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy