ভেঙে গিয়েছে পার্কে বসার বেঞ্চও। — নিজস্ব চিত্র
জেলার মূল পর্যটন কেন্দ্র কুলিক পক্ষিনিবাস লাগোয়া ইকোপার্ক। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও পক্ষিনিবাসে আসা পর্যটকদেরও পছন্দের তালিকায় স্থান পেত এই কুলিক ইকোপার্ক। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে এই পার্কের। পরিযায়ী পাখি আসার মরসুমে পার্কের এই অবস্থায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দা-সহ পর্যটকদের মধ্যে।
পার্কে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা থাকলেও গত সাত মাস ধরে তা বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। পার্কের চারটি প্যাডেল চালিত বোটই বিকল। সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে পার্কে বসার পরিকাঠামো। পর্যটকদের পানীয়জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। বেহাল ছোটদের খেলার সরঞ্জামও। প্রতিবছর মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কুলিক পক্ষিনিবাসে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা আসে। তাদের টানে পক্ষিনিবাসে ভিড় জমান উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পর্যটকরা। সে সময় তাঁরা বেড়াতে আসেন পক্ষিনিবাস সংলগ্ন রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনস্থ কুলিক ইকোপার্কে। পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষ কেন পার্কের পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ বোটিং ফের চালু করছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলির দাবি, ইকোপার্কের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন প্রায় ২০ কোটি টাকার। যা পঞ্চায়েত সমিতির তহবিলে নেই। তিনি জানান, ইকোপার্কের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তিন মাস আগে সমিতির তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাছে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেই টাকা না পাওয়া পর্যন্ত উন্নয়নের কাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণধীর কুমার জানিয়েছেন, তিনি ওই পার্কের সমস্যাটির বিষয়ে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
২০১০ সালে পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে পক্ষিনিবাস লাগোয়া মনিপাড়াতে কুলিক নদীর ধারের প্রায় সাত বিঘা জমিতে ওই ইকোপার্কটি তৈরি হয়। পর্যটকদের ইকোপার্কে যাওয়ার জন্য নদীখালের উপরে ৫০ মিটার লম্বা একটি কাঠের সেতুও তৈরি করা হয়। পার্কে গাছ, ফোয়ারা, পানীয় জল-সহ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য শৌচাগার তৈরি করা হয়। ছোটদের মনোরঞ্জনের জন্য পার্কে বিভিন্ন ক্রীড়া সরঞ্জামও আনা হয়। তৈরি করা হয় পর্যটকদের বসার জন্য ২০টি সিমেন্টের বেঞ্চও।
ইকোপার্কের কর্মীদের অভিযোগ, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে ইকোপার্কের চারটি বোট বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে পর্যটকেরা বোটে চেপে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা নদীখালে ঘুরে ইকোপার্ক ও পক্ষিনিবাসের সৌন্দর্য দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। । পার্কে যাওয়ার জন্য নদীখালের উপরে থাকা কাঠের সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়ায় যেকোনও সময়ে সেটি ভেঙে পর্যটকদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। পার্কের কর্মী সঞ্জয় সরকারের দাবি, গত একবছর ধরে পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানানো হলেও কোনও ব্যবস্তা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিনই তাঁরা পর্যটকদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন বলে জানান তিনি।
পরিবার নিয়ে ইকোপার্কে বেড়াতে আসা মালদহের বামনগোলার বাসিন্দা মনোজ দাস বলেন, ‘‘পক্ষিনিবাস ঘুরে দেখার পর ইকোপার্কে বেড়াতে এসে আমরা চরম হয়রানির শিকার হলাম। পর্যটকদের জন্য কোনওরকম পরিষেবার ব্যবস্থাই এখানে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy