Advertisement
E-Paper

নিথর টাইপ মেশিন, হতাশা

আদালত চালু থাকলে এই সময় মান্নানের অন্য রূপ। সারাদিন দম ফেলার ফুরসত থাকে না।

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০২:৩৮
কর্মহীন: শনিবারের দুপুর। অন্য দিন এ সময় দোকান সামলাতে হিমশিম খেলেও আইনজীবীদের কর্মবিরতির জন্য এখন আদালত চত্বর ফাঁকা। টান রোজগারেও। বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত

কর্মহীন: শনিবারের দুপুর। অন্য দিন এ সময় দোকান সামলাতে হিমশিম খেলেও আইনজীবীদের কর্মবিরতির জন্য এখন আদালত চত্বর ফাঁকা। টান রোজগারেও। বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত

শনিবারের বারবেলায় পারদ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই। মালদহ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের দফতরের কাছেই চেয়ারে গা এলিয়ে বসে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া খাচ্ছিলেন বছর পঞ্চান্নর আব্দুল মান্নান। সামনে নিথর হয়ে পড়ে সাধের টাইপ মেশিনটি।

অথচ আদালত চালু থাকলে এই সময় মান্নানের অন্য রূপ। সারাদিন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। চেয়ারের সামনে টেবিলে পাতা টাইপ মেশিনে দু’হাতের আঙুলে তখন ঝড় ওঠে। খোরপোশের মামলা থেকে শুরু করে সম্পত্তি মামলা, সবই এক লহমায় টাইপ করে ফেলেন তিনি। কিন্তু টানা ২৪ দিন ধরে থেমে রয়েছে তাঁর আঙুল। আইনজীবীদের কর্মবিরতির জেরে শনিবার বেলা সাড়ে ১২টাতেই শুনশান আদালত চত্বর। গরমে তাই বসে থাকা ছাড়া তাঁর কোনও কাজ নেই।

পুরাতন মালদহের সাহাপুরের বাসিন্দা পেশায় টাইপিস্ট মান্নান বলেন, “ইংরেজিতে প্রতি পাতা টাইপ করতে ১৫ টাকা ও বাংলায় টাইপ করতে ২০ টাকা নিয়ে থাকি। আদালত খোলা থাকলে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ টাকা রোজগার হয়। কোনওদিন ৭০০-৮০০ টাকাও হয়ে যায়। কিন্তু এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১০০ টাকায়।” তাঁর দাবি, এ দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৩০ টাকা রোজগার হয়েছে। আক্ষেপের সুরে তিনি বললেন, “যা রোদ পড়েছে তাতে আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না। বাড়িতে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী নিয়ে চারজনের সংসার। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া রয়েছে। এই সামান্য টাকা রোজগারে কী ভাবে সংসার চলবে তা ভেবেই পাচ্ছি না।” মালদহ জেলা আদালত চত্বরে অন্তত ৪৩ জন টাইপিস্ট রয়েছেন। তাঁদেরও হাল একই। রাকেশ দাসের মত অনেক টাইপিস্ট কর্মবিরতির পর থেকে কাজ না হওয়ায় আসছেনও না।

জেলা আদালত চত্বরেই ছোট্ট একটি কাঠোর দোকানে ৪৭ বছর ধরে কচুরি, ডালপুরি, মিষ্টি বিক্রি করছেন হরিতলার বাসিন্দা মন্টু বসাক। প্রবীণ এই ব্যবসায়ী বলেন, “আদালত চালু থাকলে প্রতিদিন সবমিলিয়ে অন্তত দুই হাজার টাকার বিক্রি হয়। কর্মবিরতির পর থেকে দিনে ৫০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। মক্কেলরাই তো আসছেন না। ফলে বিক্রি নেই বললেই চলে।” তাঁর দাবি, এখন এমন পরিস্থিতি যে ঘরের পুঁজি লাগিয়ে কোনওরকমে দোকান চলছে। বাড়িতে সাতজনের সংসার। আরও কিছুদিন এমন চললে দোকান বন্ধ রাখতে হবে। মালদহ জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসের পাশেই ১৯৬৯ সাল থেকে জুতো-ছাতা-ব্যাগ সেলাই করেন বালুচরের বাসিন্দা মানু ঋষি। আইনজীবীদের কর্মবিরতির জেরে তারও শোচনীয় পরিস্থিতি। বললেন, “আদালত চালু থাকলে প্রতিদিন অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। কিন্তু কর্মবিরতির পর থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা মাত্র রোজগার হচ্ছে।”

কর্মবিরতির জেরে রোজগারে ভাটা পড়েছে আদালত চত্বরে দায়ের দোকানি সমীর দাস, সাধন ঘোষ, জিতু দাস, সোমেন সাহা সহ অনেকেরই। আদালত চত্বরে সংবাদপত্র-পত্রপত্রিকা বিক্রেতা গোপাল সরকারেরও মাথায় হাত। কাজ না হওয়ায় মুহুরিরা অনেকেই আসছেন না। আইনজীবীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, আইনজীবীদের উপর হামলার ঘটনায় ২১-মের মধ্যে যদি মামলার রায়দান হয়ে যায় তবে কর্মবিরতি হয়তো উঠে যেতে পারে, স্বাভাবিক হতে পারে আদালতের কাজ।

Lawyers' Strike Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy