সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালীন এই লক্ষ্মী পুজোর সূচনা। জানা যায়, ১৮৫৭ সালে ওই বিদ্রোহ চলাকালীন ব্রিটিশ সেনারা তৎকালীন অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার দেশীয় সিপাহীদের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট করে দিয়েছিল। কথিত আছে, এরপর সেবছরই রায়গঞ্জের নিশীথসরণীর জমিদার পরিবারের কর্তা ঘনশ্যাম রায়চৌধুরী খাদ্যসঙ্কট রুখতে লক্ষ্মীপুজো শুরু করেন। পুজোর দিন ঘনশ্যামবাবু দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন বলেও কথিত রয়েছে।
আগে স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী জমিদারের নির্দেশে লক্ষ্মীপুজোর রাতে কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভৃত্যরা গাছে উঠে পেঁচা ধরে সেটিকে খাঁচায় ধরে রাখতেন। এরপর খাঁচা-সহ সেই পেঁচাটিকে জমিদার পরিবারের পুজোমণ্ডপে রেখে লক্ষ্মীরূপে পুজো করা হতো। পুজোর শেষে পেঁচাটির গলায় লাল ফিতে বেঁধে উড়িয়ে দেওয়া হতো। দাবি ছিল, পরের বছর লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত সেই পেঁচাটি যেসমস্ত জমির উপর দিয়ে উড়ে যাবে, সেসব জমিতে পর্যাপ্ত শস্য ও সব্জির ফলন হবে। এখন আর জমিদারি নেই। বর্তমানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পেঁচা ধরাও নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও এখনও পুরানো পুজোর নিয়ম, নিষ্ঠা মেনে লক্ষ্মীপুজো করে আসছেন জমিদার পরিবারের উত্তরসূরিরা। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী পরিবারের সদস্য প্রয়াত হলেও পুজো বন্ধ করার নিয়ম নেই।
পরিবারের এখনকার কর্তা শিবশঙ্কর রায়চৌধুরী জানান, বংশ পরম্পরায় প্রাচীন রীতিনীতি ও নিষ্ঠা মেনে প্রতিবছর পুজোর আয়োজন হয়। রায়গঞ্জের কুমোরটুলির মৃত্শল্পীরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করেন। এই পুজোয় পুরোহিত ও ঢাকিরাও বংশ পরম্পরায় পুজোর সঙ্গে যুক্ত। শিবশঙ্করবাবু জানিয়েছেন, কুলিক নদীর জলে ঘট স্থাপন করে বাড়ির দুর্গামণ্ডপে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুজো হয়। প্রতিমা হয় প্রায় চার ফুটের। পুরোহিত শালকাঠ, চন্দনকাঠ, ঘি, ১৫১টি বেলপাতা, খই ও কলা পুড়িয়ে হোমযজ্ঞ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুজোতে দেবীকে ১৫১টি পদ্মফুল-সহ মোয়া, মুড়কি, নাড়ু, পায়েস, খিচুড়ি ইত্যাদি ভোগ হিসেবে উত্সর্গ করা হয়। পুজোর পরদিন কয়েকশো বাসিন্দাকে বসিয়ে খিচুড়ি, সব্জি, মিষ্টি-সহ প্রসাদ খাওয়ানোর ব্যবস্থাও হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy