Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দিনহাটায় বামেদের ভরসা প্রয়াত কমলই

লড়াইটা যে কঠিন, তা জানা। তাই প্রয়াত নেতার নামে ঘন ঘন ‘অমর রহে’ স্লোগান উঠছে। তাঁর ছেলেকে সামনে রেখেই এবার কোচবিহারে লড়াই বামেদের। প্রয়াত নেতার নাম কমল গুহ। তাঁর ছেলে উদয়ন গুহকে সামনে রেখেই এ বার নির্বাচনে লড়ছেন বামেরা। সামনে থেকে লড়াই করে দলের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে কাউন্সিলরের লড়াইয়ে সামিল দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু।

নমিতেশ ঘোষ
দিনহাটা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

লড়াইটা যে কঠিন, তা জানা। তাই প্রয়াত নেতার নামে ঘন ঘন ‘অমর রহে’ স্লোগান উঠছে। তাঁর ছেলেকে সামনে রেখেই এবার কোচবিহারে লড়াই বামেদের।

প্রয়াত নেতার নাম কমল গুহ। তাঁর ছেলে উদয়ন গুহকে সামনে রেখেই এ বার নির্বাচনে লড়ছেন বামেরা। সামনে থেকে লড়াই করে দলের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে কাউন্সিলরের লড়াইয়ে সামিল দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু। এ ভাবেই দিনহাটা পুরসভায় প্রচার চলছে। এ ভাবেই ফের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছেন উদয়নবাবুরা। যা দেখে বাম বিরোধীরা অনেকেই নানা কটাক্ষ করছেন।

ভোটে নামলে নানা কথা শুনতে হয়। সেটা জানেন উদয়নবাবু। তাই দিনহাটা পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নিজেই পুরসভা ভোটে লড়ছেন বলে খোলাখুলি জানালেন কমল-তনয় উদয়ন। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। কোচবিহারে চার পুরসভা মিলিয়ে বামেদের পক্ষে ২১ টি আসনে লড়াই করছে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীরা।

উদয়নবাবু বলেন, “বামফ্রন্ট প্রার্থীদের জেতানোর আবেদন জানিয়েই আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। কেন আমাদের জেতাবেন তাঁরা? সে কথাও তুলে ধরছি। বাম শাসন কালে এলাকার উন্নয়ন হইয়েছে। চারদিকে শান্তি ছিল। এখন অপশাসন চলছে। দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। মানুষের নিরাপত্তা নেই। ভুঁইফোড় সংস্থার রমরমা। সে কথাই আমরা তুলে ধরছি।”

কোচবিহার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুব লিগের কোচবিহার জেলা সম্পাদক গোপাল দে। তিনি বলেন, “কমল গুহের অবদান কোচবিহারের মানুষ জানেন। তাঁকে ভালবাসেন। আমরা তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন দল করেছি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রচারে তিনি থাকবেন। আমরা উন্নয়ন করতে চাই। পানীয় জল থেকে শুরু করে নিকাশি সবেতেই পরিষেবা দিতে চাই। সে কথাই তুলে ধরছি।”

কোচবিহার জেলায় এবারে চার পুরসভায় ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে কোচবিহার বাদে দিনহাটা, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে বামেরা। কোচবিহার পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। বামেদের কাছে এবারে কঠিন লড়াই। তিন পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া তাঁরা। আবার কোচবিহার পুরসভাও নিজেদের দখলে আনতে কোনও কসুর রাখছেন না তাঁরা। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক নির্বাচনে জেতা তৃণমূল পুরসভা এলাকায় নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করে তুলেছে।

দলীয় সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে এবারে নিজেই লড়াইয়ে নামেন উদয়নবাবু। তিনি দিনহাটার বিধায়ক। বামেদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে উদয়নই হবেন দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান। সেই লক্ষ্যেই মরিয়া হয়ে উঠেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। তাই ভোটের হাওয়া পুরোপুরি নিজেদের পালে নিতে কমল গুহর নাম নিয়ে প্রচার শুরু করেছে। সামনে রাখা হচ্ছে কমল-তনয় উদয়নবাবুকে।

এদিন সকাল সাড়ে ৯ টা নাগাদ উদয়নবাবু প্রচার শুরু করেন কোচবিহার পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তিনি যান ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট চান। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বাসিন্দা, দোকানি থেকে শুরু করে পথ চলতি মানুষ সকলের কাছেই হাতজোড় করে ভোট চান। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী গোপালবাবুকে পরিচয় করিয়ে দেন ভোটারদের সঙ্গে। উদয়নবাবুকে বলতে শোনা যায়, “ভোটটা সিংহ চিহ্নে দেবেন। এলাকার উন্নয়ন করব। নিরাপত্তা দেব।”

৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন ভূষণ সিংহ। তিনি এলাকার দাপুটে নেতা বলেই পরিচিত। তাঁর টিপ্পনি, “উদয়নবাবু নিজের ওয়ার্ডেই হারতে বসেছেন। আর এখানে যাকে দাঁড় করিয়েছেন তিনি বসন্তের কোকিল। সারা বছর তাদের দেখা যায়নি। এখন এসেছেন ভোট এসেছে বলে। এলাকার মানুষের পাশে সব সময় থাকি। এলাকার কী উন্নয়ন করেছি, মানুষ জানেন। আমরা বিপুল ভোটে জিতব।”

দিনহাটার প্রায় সবগুলি ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছেন উদয়নবাবু। নিজের ওয়ার্ডেও প্রচার যাচ্ছেন সকাল-বিকেল। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল ওই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়েছে সুস্মিতা সাহা নামে এক তরুণীকে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমাদের প্রার্থীরা সর্বত্রই জয়ী হবে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। সাড়ে তিন বছরে কোচবিহারের উন্নয়ন দেখে মানুষ খুশি। ওই ছাত্রীর হাতেই পরাজিত হবেন উদয়নবাবু। কারণ তাঁরা মানুষের জন্য কিছু করেননি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE