Advertisement
E-Paper

অ্যাসিডে কারাদণ্ড

ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় দোষী যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিল আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০২:৫৫
দোষী: আলিপুরদুয়ার আদালতে অভি সাহা। ছবি: নারায়ণ দে

দোষী: আলিপুরদুয়ার আদালতে অভি সাহা। ছবি: নারায়ণ দে

ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় দোষী যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিল আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক। বছর দুয়েক আগে দুপুর বেলায় কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড মারে অভি সাহা নামে ওই যুবক। দ্রুত মামলার রায় ঘোষণা হওয়ায় খুশি শহরের মানুষ।

আলিপুরদুয়ার আদালতের সরকারি আইনজীবী জহর মজুমদার জানান, অ্যাসিড হামলায় এই প্রথম সাজা ঘোষণা হল উত্তরবঙ্গে। এ দিন বিচারক অশোক কুমার পাল দোষীকে ৩২৬এ ধারায় অ্যাসিড ছোড়ায় যাবজ্জীবন ও দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছ’মাস জেল, ৩০৭ ধারায় হত্যার চেষ্টায় যাবজ্জীবন ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের জেল, এবং ৩৪১ ধারায় এক মাসের জেল ও পাঁচশো টাকা জরিমানার সাজা দেন। বিরোধী পক্ষের আইনজীবী সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের লোহার গারদে বসে অ্যাসিড হামলায় দোষী সাব্যস্ত অভি। পাশে দরজায় হেলান দিয়ে মা। ফিসফাস কথা চলছে মা ও ছেলের। কিছুক্ষণ পর একটু দূরে সরে দাঁড়ালেন মা। চোখ উপচে নামছে জলের ধারা। গারদে বসে এক মনে তখন লোহার গারদে আঙুল বোলাচ্ছে ছেলে। বেলা দেড়টা নাগাদ শুরু হয় আদালত। একটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিটে মামলাটি উঠতেই দু’হাত জোড় করে এক পলকে বিচারকের আসনের দিকে তাকিয়ে ছিল অভি। কিছু পরেই বিচার অশোক কুমার পাল দোষীকে ডেকে নেন কাঠগোড়ায়। তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘তোমার বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় মামলা রয়েছে। দু’টি ধারায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তোমার কিছু বলা আছে?’’ এ বার হাত জোর করে অভি সাহাকে বলতে শোনা গেল ‘‘বাড়িতে বাবা মা রয়েছে।’’ তারপরেই পুলিশকর্মীরা কাঠগড়া থেকে নামিয়ে অভি সাহাকে ফের গারদে ঢুকিয়ে দেন। এর মাঝেই অভি সাহার মা ঝুনু সাহা আদলতে কিছু বলতে চান। তবে আদালতের পুলিশ তাঁকে থামিয়ে দেন। বিচারক কয়েক মিনিটের বিরতি নিয়ে ফের আসেন আদালতে। তারপরেই যাবজ্জীবনের সাজা শোনান বিচারক।

আদালতে চত্বরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভি সাহার মা ঝুনু সাহা। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। ওই মেয়েটির সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল।’’ আদালত থেকে পুলিশ লকাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় অভি সাহাও দাবি করেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার সর্ম্পক ছিল। এখনও ওই ছাত্রীটিকে সে বিয়ে করতে চায়। অভির বাবা প্রদীপ সাহা জানান, তাঁরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।

২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ি ফেরার সময় ওই তরুণীকে লক্ষ করে অ্যাসিড ছুড়েছিল অভি। কোচবিহারের এ বিএন শীল কলেজের ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল সে। ওই ছাত্রীর দাবি, যাতায়াতের পথে তাকে সবসময় উত্যক্ত করত ওই যুবক। যদিও অভি ও তার পরিবারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল তাঁর। অ্যাসিড হামলায় ওই তরুণীর মুখে গভীর ক্ষত হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর এখন কলকাতাতে রয়েছে ওই তরুণী। গত এক বছর চিকিৎসার জন্য এই মেধাবী ছাত্রীর পড়াশোনাও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

Acid Attack Life Term
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy