Advertisement
E-Paper

গনির ছায়া সঙ্গী সবার

ঘড়ির কাঁটা সকাল সাড়ে সাতটা বাজতেই লাল রঙের গাড়ি নিয়ে ভোট দিতে বেরিয়ে গেলেন মালদহের উত্তর ও দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) এবং তাঁর ছেলে ইশা খান চৌধুরী। ঠিক এক ঘণ্টা বাদেই সিংহদুয়ার দিয়ে বেরোলেন ওই পরিবারের আরও এক সদস্য উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নুর।

সৌমিত্র কুণ্ডু, অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৫
মা: ভোটের দিন সকালে দুই সন্তানের সঙ্গে মৌসম। ছবি: সন্দীপ পাল

মা: ভোটের দিন সকালে দুই সন্তানের সঙ্গে মৌসম। ছবি: সন্দীপ পাল

হাট করে খোলা কোতোয়ালি হাভেলির সিংহদুয়ার। অন্দর মহল সকাল ছ’টা থেকেই কর্মচঞ্চল। ঢুকতেই ডান দিকের হেঁসেল থেকে ভেসে আসছে মাছ ভাজার গন্ধ। আর এক হেঁসেল থেকে ওমলেটের গন্ধ। রাঁধুনি, কর্মী থেকে শুরু করে ব্যস্ত পরিবারের লোকজনেরাও।

মালদহের দুই আসনে কার্যত গনিখানের ছায়ার সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে মোদী শিবিরকে।

ঘড়ির কাঁটা সকাল সাড়ে সাতটা বাজতেই লাল রঙের গাড়ি নিয়ে ভোট দিতে বেরিয়ে গেলেন মালদহের উত্তর ও দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) এবং তাঁর ছেলে ইশা খান চৌধুরী। ঠিক এক ঘণ্টা বাদেই সিংহদুয়ার দিয়ে বেরোলেন ওই পরিবারের আরও এক সদস্য উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নুর।

বিজেপি যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সে কথাই জানান, ডালুবাবু, ইশা এবং মৌসমও। গনিখানকে সামনে রেখেই তাঁর পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনের ময়দানে নামে। দল আলাদা হলেও ও বারে তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ডালু মনে করেন, ‘‘গনি খানের প্রভাব তো রয়েইছে। তিনি মালদহের জন্য করেছেন। তাঁকে মানুষ এখনও ভালবাসেন।’’ তাঁর মতে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-ই। তবে ভাল ভোট হয়েছে। তাঁর সমস্যা হবে না।

দক্ষিণ মালদহের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেও স্পষ্ট, তিনিও কার্যত গনি পরিবারকে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘গনি খানের নাম করেই এত দিন জিতে এসেছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তাঁরা কিছু করেননি। এ বার মানুষ জবাব দেবেন।’’ ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের মোয়াজ্জেব মোহেসন প্রার্থী। কিন্তু তাঁকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ডালু বা শ্রীরুপা। তার উপর সিপিএম ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেয়নি।

উত্তর মালদহে বিজেপির প্রার্থী তথা এক সময় সিপিএমের মালদহের প্রভাবশালী নেতা খগেন মুর্মুর প্রধান প্রতিপক্ষ গনি পরিবারেরই দুই সদস্য। কংগ্রেসের ইশা এবং তৃণমূলের মৌসুম। তবে খগেন মনে করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এই কেন্দ্রে দলের প্রার্থীর নাম তো সবার আগে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রচার কতটা জোরদার হয়েছে, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে।’’ মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি মনে করেন ইশাকেই। ইশার কথাতেও স্পষ্ট তিনি মোদী শিবিরকেই তাঁর কেন্দ্রে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে বিজেপির সঙ্গে লড়াই হবে। মৌসম তৃণমূলে গিয়েছে। এটা অনেকেই মেনে নেননি। তৃণমূল আমাদের পরিবার ভাঙতে আগেই চেষ্টা করেছিল। সেটা সফল হয়নি। তাঁরা ভেবেছিল কংগ্রেস পরিবারের কাউকে নিলে তাদের পক্ষে বাড়তি ভোট আসবে। সেটা হয়নি। এখনও ৮৫ শতাংশ ভোট কংগ্রেসেরই।’’

পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ভাল ফল করেছে উত্তর মালদহে। বিজেপি’র শক্তিবৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন মৌসম। তিনি বলেন, ‘‘মামার (গনিখান) আশীর্বাদ রয়েছে আমার উপরে। একটা সাম্প্রদায়িক শক্তি আছে উত্তর মালদহে। তা ঠেকাতে আমি যা করেছি, তা তিনি মানতেন।’’

এ দিন সকালে সবার আগে ঘুম থেকে ওঠেন ইশা। তিনি নিজেই তাঁর সর্ব ক্ষণের সঙ্গীকে ঘুম থেকে তুলে দেন। তারপরে ছুটে যান বাবা দক্ষিণ মালদহের প্রার্থী ডালুবাবুর ঘরে। এরই মাঝে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের এক এক করে বক্তব্য দেওয়ার আবদার মেটান। এরই ফাঁকে দুটো বিস্কুট ও জল খেয়ে নেন। সকালে স্যান্ডউইচ, ওমলেট খেয়ে নিজের ঘর থেকে বের হন ডালুবাবু। তারপরে বাবা ও ছেলে মিলে চলে যান কোতুয়ালি জুনিয়ার বেসিক প্রাথমিক স্কুলের ৬০ নম্বর বুথে। ভোট দেওয়ার পর জয় নিয়ে আশাবাদী বলে জানান তাঁরা।

কিন্তু এ বার সঙ্গে মৌসম নেই কেন? ডালুবাবু বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত বেরিয়ে যাব নিজের কেন্দ্রে। তাই ভোট দিতে সকালে চলে এসেছি।’’ কোতুয়ালি কি সৌজন্য হারাচ্ছে? জবাবে ডালু বলেন, “দলবদল আমরা করেনি। আমরা কংগ্রেসে আছি, আর কংগ্রেসেই থাকব।”

এরপরেই সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গোলাপি রঙের শাড়ি পরে বের হন মৌসম। ছোট মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে নেন তিনি। তারপরে সিংহদুয়ার দিয়ে পায়ে হেঁটে যান বরকতের মাজারে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর একই বুথে গিয়ে ভোট দেন। এবার একসঙ্গে দেখা গেল না কোতুয়ালি পরিবারের সদস্যদের? মৌসম বলেন, “সবাই সবার মতো ব্যস্ত। তবে আমি ডালু মামা ও ইশাদাকে ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করি।”

২৩ মে কোতোয়ালি হাবেলির তিন প্রার্থীর কী হয়, তার দিকে নজর থাকবে গোটা জেলারই। তবে, গনি খানের কোতোয়ালিতে বিজয় উৎসব হবেই বলে মনে করে মালদহ।

Lok Sabha Election 2019 Malda Mausam Noor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy