Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
গণনাকেন্দ্র যেন কেল্লা
general-election-2019-west-bengal

আজ ফল

একই কড়াকড়ি উত্তর মালদহ কেন্দ্রের গণনাকেন্দ্র মালদহ কলেজেও। এখানেও বালির বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কার।

প্রস্তুতি: বালুরঘাটে জমায়েত পুলিশদের। ছবি: অমিত মোহান্ত

প্রস্তুতি: বালুরঘাটে জমায়েত পুলিশদের। ছবি: অমিত মোহান্ত

জয়ন্ত সেন ও অভিজিৎ সাহা
মালদহ ও বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০৫:০৩
Share: Save:

দুর্গ বা কেল্লা বললে একটু বাড়াবাড়ি হবে ঠিকই। কিন্তু চারপাশের কঠিন নিরাপত্তার জাঁকজমক দেখলে সেটা মনে না পড়া ছাড়া উপায় নেই। পুরো চত্বর বাঁশের ব্যারিকেডে ঘেরা। আছে বাঁশের ড্রপগেটও। গণনাকেন্দ্রের গেটের সামনে বালির বস্তা দিয়ে তৈরি বাঙ্কার। সেখানে এসএলআর হাতে অন্তত জনাছয়েক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। মূল ভবনের পিছনের একটি ভবনে ঠিক একই ভাবে আরও একটি বাঙ্কার ও সামনে অন্তত জনাচারেক জওয়ান। এ ছাড়া ল্যাবরেটরি ভবনের সামনে আরও একটি বাঙ্কারের সামনে দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। বাঁশের ব্যারিকেডের চারপাশে রাজ্য পুলিশ তো রয়েছেই। পুরো চত্বর জুড়ে সিসি ক্যামেরাও। এটা মালদহ পলিটেকনিক কলেজ, মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের গণনাকেন্দ্র।

আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু ভোট গণনা। তার আগে বুধবার দুপুরে সেখানকার নিরাপত্তার এমনই চেহারা দেখা গেল। শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশি নজরদারিই নয়, স্ট্রংরুমগুলিকে ঘিরে নজরদারি রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও। তাঁরাও স্ট্রংরুমের বাইরে রাখা সিসি ক্যামেরার ডিসপ্লে বোর্ডে চোখ রেখে বসে আছেন দিনভর। বিজেপির প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীও এ দিন স্ট্রংরুমগুলি ঘুরে দেখেন। বিজেপিরও তিন কর্মী পালা করে সেখানে রয়েছেন। কংগ্রেস কর্মী রাজকুমার কর্মকার বলেন, “তিনজন কর্মী ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রাখছি স্ট্রংরুমে।” এদিকে ভোট গণনার শেষ প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এদিন দুপুরে সেখানে হাজির হন সাধারণ পর্যবেক্ষক ওনিত পানিয়াং থেকে শুরু করে এই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যও। এ দিন কৌশিক বলেন, “কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেই গণনা হবে। গণনার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”

একই কড়াকড়ি উত্তর মালদহ কেন্দ্রের গণনাকেন্দ্র মালদহ কলেজেও। এখানেও বালির বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কার। বাঙ্কারের পিছন থেকে নজরদারি চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। অপরদিকে, স্ট্রংরুমে সিসি টিভির মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছেন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। স্ট্রংরুমের পাহারায় রাত জাগছেন তাঁরা। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের কড়া নজরদারিতে রয়েছে এই কলেজ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের পর থেকেই আটঘণ্টা অন্তর পালা করে স্ট্রংরুম পাহারায় রয়েছেন ডান-বাম রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। নিয়ম করে স্ট্রংরুম পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রার্থীরাও। ২৯দিন ধরে টানা পাহারা দেওয়ার পরেও এ দিনও সজাগ প্রহরীর মতো রয়েছেন চার দলের প্রার্থীরা। তৃণমূলকর্মী মহম্মদ হাসানুরুজ্জমান বলেন, “আট ঘণ্টা পালা করে স্ট্রংরুমের সিসিটিভির মনিটরে নজরদারি চালিয়েছি। এ দিন রাতে আরও সজাগ থাকব। কারণ, শেষ মূহূর্তে নজরদারির কোনও ত্রুটি রাখতে চাই না।” তৃণমূলের মতোই স্ট্রংরুমে পালা করে সময় কাটাচ্ছেন কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএম কর্মীরাও। তাঁদের দাবি, গণনার সকালে খুলবে স্ট্রংরুম। তাই এ দিন তাঁদের অত্যন্ত সর্তক থাকতে হবে।

বালুরঘাট কলেজে এই কেন্দ্রের গণনা হচ্ছে। এখানেও সমান ভাবে চলছে প্রশাসনিক নজরদারি। এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সজাগ রয়েছেন গণনার আগের দিন। বিজেপির দাবি, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বালুরঘাট কলেজের গণনাকেন্দ্রে ঢুকে তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা কার্যত তাণ্ডব চালিয়ে ভোটের ফল উলটে দিয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সর্তক বিজেপি গণনাকেন্দ্রের বাইরে রাতভর পাহার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। দলীয় সূত্রে খবর, গণনাকেন্দ্রের কাছাকাছি বিভিন্ন হোটেল, বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে বিজেপি নেতাকর্মীরা। আরএসপি প্রার্থী রণেন বর্মণও গণনাকেন্দ্রের সামনে থেকে ঘুরে গিয়েছেন। গণনাকেন্দ্রের ঠিক সামনের একটি লজে কর্মীদের রেখে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা নিলেও সেটা গণনাকেন্দ্রের একশো মিটারের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় সেই লজ সিল করেছে প্রশাসন। তাই বাধ্য হয়েই গণনাকেন্দ্রের আশেপাশের নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও পার্টি অফিসে দলের কর্মিদের থাকার ব্যবস্থা করেছে আরএসপি। অন্যদিকে, তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের বাড়ি গণনাকেন্দ্র থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। অর্পিতা নিজের ফ্ল্যাটে বসে বিশ্বস্ত কর্মীদের গণনাকেন্দ্রের চারপাশে পাহারায় বসিয়ে রেখেছেন। সেই কর্মীদের থেকে প্রতি মুহূর্তের আপডেট নিচ্ছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE