Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শামুক কুড়িয়ে দিন কাটে, উৎসাহ ঘুচেছে ভোটে

ভোটের আঁচ কেমন ভাবে পড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়? কেমন আছেন দুঃস্থ, একদা নির্যাতিত, বা প্রান্তিক ভোটাররা? জনজীবনের সেই ছবি তুলে ধরছে আনন্দবাজার।রেশমা বলেন, ‘‘সকালে, বিকেলে দু’বেলা শামুক কুড়িয়ে কেজিপ্রতি ২০ টাকা করে বিক্রি করি। প্রতিদিন দুই থেকে তিনশো টাকা আয় হয়।’’

কুড়িয়ে আনা শামুক। নিজস্ব চিত্র

কুড়িয়ে আনা শামুক। নিজস্ব চিত্র

মেহেদি হেদায়েতুল্লা 
লাধি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৬
Share: Save:

চৈত্র শেষে বৈশাখ পড়ল। হাতে কাজ নেই। বাড়িতে ছোট ছোট দুই ছেলে আর এক মেয়ে। খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা গ্রামের রাস্তা দিয়ে আর ভ্যান চালাতে পারেন না স্বামী। ছেলেমেয়েদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে কাক ভোরে ছুটতে হয় সুধানি নদীতে শামুক কুড়োতে। এই শামুক বিক্রি করেই কোনও রকম চলছে সংসার।

কথাগুলো বলছিলেন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার লাধি আদিবাসী পাড়ার সুনীতা মার্ডি। ওই পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, সুধানি নদী থেকে ঝুড়ি ভর্তি শামুক নিয়ে রাস্তায় উঠছেন বিভিন্ন বয়সের মহিলারা। সুনীতার মতোই রেশমা মুর্মু, রোহিতা টুডুরাও সংসার চালাচ্ছেন শামুক বিক্রি করেই।

রেশমা বলেন, ‘‘সকালে, বিকেলে দু’বেলা শামুক কুড়িয়ে কেজি প্রতি ২০ টাকা করে বিক্রি করি। প্রতিদিন দুই থেকে তিনশো টাকা আয় হয়।’’

নিজস্ব জমি-জমা নেই এঁদের প্রায় কারওরই। কারও কারও আছে ভিটেমাটিটুক‍ু। নদীর চরে সব মিলিয়ে ১৫০ পরিবারের বসবাস। বছরের ধান ও পাটের মরসুমে পরের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে বর্ষা আর শীতের শুরু পর্যন্ত এঁদের হাতে তেমন কোনও কাজ থাকে না। তাই এই সময়ে আশপাশের নদী-বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করেন তাঁরা। গ্রামে নেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। নেই পানীয় জল। রাস্তাঘাট নেই। সুধানি নদীতে সেতুর দাবি জানিয়েও মেলেনি সেতু। ফলে ঘুরপথে চাকুলিয়া যেতে হয়। সরকারি সুযোগও পান না তাঁরা। তাই জানালেন, ভোট নিয়ে তাঁরাও উৎসাহী নন।

কথা হয় আর এক গৃহবধূ মালতী হাঁসদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘কী করব, কাজ নেই যে। ছেলে-পুলেদের জন্য দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে বাধ্য হয়ে নদীতে নেমে শামুক কুড়িয়ে বিক্রি করছি।’’

শুধু সুনীতা-মালতীরা নন, শিশুরাও হাত লাগায় শামুক কুড়োনয়। গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মংলু টুডু তাদেরই একজন। মংলু জানায়, স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা-মায়ের কাছে টাকা চাইলে তাঁরা দিতে পারেন না। তাই স্কুল ছুটির পরে বা স্কুল বন্ধ থাকলে শামুক কুড়োয় মংলু। তার মতোই শামুক কুড়োয় রনেন, মাটরু, রুবিরা। রুবির মুখে মিষ্টি হাসি, “স্কুল ছুটির পরে নদীতে এসে শামুক কুড়াই।’’ গ্রামের বাসিন্দা ভরত মুর্মু বলেন, “বাচ্চারা সাধারণত শখ মেটাতেই শামুক কুড়োয়। আর আমরা বিক্রি করে সংসার চালাই।”

তাঁরা জানান, বাজারে শামুকের ভালই চাহিদা। নদী থেকে শামুক সংগ্রহ করার পরে তা বস্তাবন্দি করে শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি এবং বাগডোগরায় গিয়ে বিক্রি করেন। তবে ভরতের কথায়, ‘‘এ কাজ করতে ভাল লাগে না। বিকল্প কোনও কাজের ব্যবস্থা থাকলে এত পরিশ্রম আর অনিশ্চয়তার কাজ করতে হত না।’’

কাল বাদে পরশু ভোট। কিন্তু সে কথা জিজ্ঞাসা করতেই গ্রামের বাসিন্দা আনানিয়াল মুর্মু বলেন, ‘‘ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। আর ভোট-পর্ব মিটলেই কেউ আর ফিরে তাকান না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Tribal Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE