আম পাকাতে ‘ক্ষতিকর’ কার্বাইডের ব্যবহার রুখতে জেলা উদ্যানপালন দফতরের পাশাপাশি মালদহের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর সাব-ট্রপিক্যাল হর্টিকালচারের অন্তর্গত কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রও জেলার চাষিদের ফি বছর সচেতন করছে। কিন্তু তাতে আমল না দিয়ে আম পাকাতে জেলায় যথেচ্ছ কার্বাইডের ব্যবহার হয় বলে অভিযোগ। মালদহে কার্বাইড গানের ব্যবহারে বেশ কিছু শিশু-কিশোরের দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসার ঘটনায় জেলায় সহজলভ্য কার্বাইডের ব্যবহার এখন চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক একটি দুর্ঘটনার জেরে মধ্যপ্রদেশের ১৪টি শিশু ও কিশোর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে দীপাবলিতে ব্যবহৃত বাজি ‘কার্বাইড গান’-এর দৌলতে। কালীপুজোর দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত সেই বন্দুকের দৌলতে চোখের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছে মালদহের অন্তত ১১ জন শিশু-কিশোর-যুবককে— এমনটাই দাবি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের। যদিও সরকারি হাসপাতাল বা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওই সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি নেই বলে স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই গান-এ ব্যবহৃত কার্বাইড কী ভাবে শিশু-কিশোরদের হাতে এল?
উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার একাংশ চাষি থেকে শুরু করে আম ব্যবসায়ীরা আমকে দ্রুত পাকাতে যথেচ্ছ কার্বাইডের ব্যবহার করে আসছে। মালদহ জেলায় যেহেতু মূল চাষ আম, তাই চাষিদের ঘরে ঘরে ওই কার্বাইড মজুত থাকে। পাশাপাশি খোলা বাজারেও কার্বাইড মেলে। কলা পাকাতেও সারা বছর এই কার্বাইডের ব্যবহার হয় মালদহে। মালদহ জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা আম চাষের মরসুমের চাষি ও ব্যবসায়ীদের আম পাকাতে কার্বাইড-এর বদলে ‘ইথরেল’ ব্যবহারের জন্য সচেতন করে আসছি। কিন্তু তাও লুকিয়ে একাংশ চাষি ও ব্যবসায়ী কার্বাইড ব্যবহার করে।’’
এই প্রসঙ্গে মালদহের কেন্দ্রীয় কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান দুষ্যন্তকুমার যাদব বলেন, ‘‘আম বা ফল পাকাতে কার্বাইডের বদলে ইথরেল ব্যবহারের জন্য আমরাও চাষিদের সচেতন করে থাকি। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বা ফল খেলে কিডনি থেকে শুরু করে মানবশরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।’’ জেলার চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ দেবদাস মুখোপাধ্যায় এই দিন বলেন, ‘‘কার্বাইড গান ব্যবহারে অনেকেরই চোখের ক্ষতি হয়েছে। কার্বাইড বিক্রিতে রাশ টানা দরকার।’’ পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, ‘‘খোলাবাজারে কার্বাইড বিক্রি করার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)