Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়াশোনাকেই আঁকড়ে ধরেছিল মাসুমা

বাবা মারা গিয়েছেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র পাঁচ। কাছাকাছি সময়েই ছেড়ে চলে যান মা। যত বড় হয়েছে, তাই মাসুমা আঁকড়ে ধরেছে পড়াশোনাকেই। মঙ্গলবার তার প্রথম স্বীকৃতি মিলল।

মিষ্টিমুখ: সাফল্যের আনন্দে। —নিজস্ব চিত্র।

মিষ্টিমুখ: সাফল্যের আনন্দে। —নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

বাবা মারা গিয়েছেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র পাঁচ। কাছাকাছি সময়েই ছেড়ে চলে যান মা। যত বড় হয়েছে, তাই মাসুমা আঁকড়ে ধরেছে পড়াশোনাকেই। মঙ্গলবার তার প্রথম স্বীকৃতি মিলল।

মালদহের কালিয়াচক থানার বামনগ্রাম-মোসিনপুরের মেয়ে মাসুমা। রতুয়ার বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ৭৫৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় ঢুকে পড়েছে মাসুমা। আর মাসুমার এমন সাফল্য উচ্ছ্বসিত স্কুল সহ পাড়া প্রতিবেশী সকলেই। এরই মাঝে আগামী দিনে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দুঃস্থ পরিবারের এই মেয়েটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসুমার বাবা মহম্মদ মুকসেতুর রহমান অসুস্থতার কারণে মারা যান। ওই বছরই তার মা অন্যত্র সংসার পাতেন। ফলে মাসুমা ও তার দুই বছরের বোন মৌসুমীকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন মুকসেতুরের বাবা মা মুরসেদ আলি ও সাবিনা বিবি। মুরসেদ দিনমজুরি করে গ্রামেরই এক নার্সারি স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করান মাসুমাকে। সেই সময় থেকেই মাসুমার মেধা নজর কেড়েছিল গ্রামবাসীদের। উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি এলাকার একটি মিশন কর্তৃপক্ষ মাসুমার পড়াশোনা সহ দেখভালের দায়িত্ব নেয়। সেখান থেকেই পড়াশোনা শুরু করে মেয়েটি। পরবর্তীতে মিশনের উদ্যোগে ভর্তি হয় রতুয়ার বটতলা হাই আদর্শ হাই মাদ্রাসায়। সেখান থেকেই পরীক্ষা দিয়ে রাজ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে এই ছাত্রীটি।

এ দিনও মাসুমা রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ওই মিশনে। সেখানে তাঁকে নিয়ে উৎসাহিত মিশন কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীরা। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হতেই তাকে মিষ্টি খাওয়ানোর হিড়িক পড়ে যায়। মাসুমা পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা ও গল্পের বই পড়তে ভালবাসে। বাঁধা ধরা নিয়ম না থাকলেও দিনের মধ্যে সাত থেকে আট ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতেন বলে জানিয়েছে মাসুমা।

মাসুমা জানায়, ভাল ফল হবে আশা করেছিল। তবে মেধা তালিকায় স্থান অধিকার করবে, তা ভাবতেই পারেনি। সে বলে, ‘‘চিকিৎসক হয়ে গ্রামে গিয়ে মানুষের চিকিৎসা করতে চাই।’’ তবে স্বপ্নপূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে মাসুমা। যদিও মিশন কর্তৃপক্ষ সব সময় তাঁর পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংস্থার সম্পাদক মহম্মদ জানে আলম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব সময়ই মাসুমার পাশে থাকব।’’

মাসুমার ফলের খবর পৌঁছেছে মোসিনপুরেও। মুরসেদ আলি ও সাবিনা বিবি বলেন, ‘‘খুবই ভালো লাগছে। পিতৃহীন মেয়েটি মানুষ হতে পারলে খুবই ভালো লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Madrasah West Bengal Board Of Madrasah Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE