Advertisement
E-Paper

বিয়ে রুখে পড়া, কুর্নিশ দুই ছাত্রীকে

বিয়ে রোখা বছর পনেরোর শিবানী অধিকারী হবিবপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পার্বতীডাঙা গ্রামের মেয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
দৃষ্টান্ত: অনুষ্ঠানে জুলি রজক। —নিজস্ব চিত্র।

দৃষ্টান্ত: অনুষ্ঠানে জুলি রজক। —নিজস্ব চিত্র।

সুপাত্র মিলেছে এই অজুহাতে, লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দিয়ে দুজনেরই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল পরিবার। একজনের বয়স পনেরো, অন্যজনের সতেরো। কিন্তু দুজনেই রুখে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেয় বিয়ে নয়, পড়াশোনা করতে চায় তাঁরা। এই দুই কন্যাকে বুধবার শিশু অধিকার সপ্তাহের শেষে কুর্নিশ জানালো মালদহ জেলা প্রশাসন। শুধু তাঁরাই নয়, ফেসবুকে প্রতারণার প্রতিবাদ করে ‘বীরাঙ্গনা’র সম্মান প্রাপক আর এক কন্যা জুলি রজককেও এ দিন ওই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা জানান জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অশোক পোদ্দার প্রমুখ।

বিয়ে রোখা বছর পনেরোর শিবানী অধিকারী হবিবপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পার্বতীডাঙা গ্রামের মেয়ে। সে দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরের নবম শ্রেণির ছাত্রী। এ দিনের এই অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক স্কুলের কয়েকশো ছাত্রী-শিক্ষকদের সামনে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সে জানালো তাঁর বিয়ে রোখার কাহিনী। জানাল, গত ২৫ অক্টোবর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সে জানতে পারে তার বাবা ধুলিয়ানের এক পাত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক করেছে। সে প্রতিবাদ করে। কিন্তু পরিবারের কেউই তাঁর কথা শোনেনি, বরং স্কুল ও টিউশন পড়তে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পয়লা নভেম্বর জোর করে সে স্কুলে আসে এবং প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়িকে গিয়ে সরাসরি জানায়, বিয়ে করতে চায় না, পড়তে চায়। ছাত্রীর মুখে সেই আর্তি শোনার পর প্রধান শিক্ষক সহ স্কুলের একদল শিক্ষক সেদিনই তাঁর বাড়িতে যায় এবং নরমে-গরমে পরিবারের লোকদের বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়। শুধু তাই নয়, স্কুলের উদ্যোগেই পরদিন পুলিশ, ব্লক প্রশাসন ও চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা গিয়ে তাঁর বাবার কাছ থেকে ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হবে না বলে মুচলেকাও নেয়। শিবানী বলে, ‘‘আমি এখন স্কুলে যাচ্ছি।’’

আর এক কন্যা হবিবপুর ব্লকেরই ঋষিপুর হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পূজা সিংহ। স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা চলায় এ দিন সে অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেনি। জানা গিয়েছে ছোটবেলাতেই পূজার বাবা মারা গিয়েছেন। মা মানসিক রোগী। দুই দাদা একমাত্র এই বোনকে আর পড়াতে চান না। দাদারা এক পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেললে পূজা বেঁকে বসে, কিন্তু দাদাদের মানাতে না পেরে গত ১০ নভেম্বর সরাসরি চাইল্ড লাইনে ফোন করে সে কথা জানায়। চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে দুই দাদাকে বুঝিয়ে বোনের বিয়ে রুখে দেয়। সে সময় পূজাকে কয়েকদিন মালদহ সরকারি মহিলা হোমেও রাখা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত দাদারা বোনকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সে এখন নিয়মিত স্কুলেও যাচ্ছে।

স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা চলায় মঙ্গলবার কলকাতায় গিয়ে ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মান নিতে পারেনি পুখুরিয়া হাইস্কুলের ছাত্রী জুলি রজক। মেয়ের হয়ে বাবা সেই সম্মান স্মারক নিয়ে আসেন। এ দিন অবশ্য জেলা প্রশাসনের তরফে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসেন জুলি।

minor marriage Malda মালদহ নাবালিকা বিয়ে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy