পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তরবঙ্গকে অশান্ত করার চক্রান্তের অভিযোগ আনলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নদিয়ার রানাঘাটের প্রশাসনিক সভা থেকে এই অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘'উত্তরবঙ্গকে অশান্ত করতে সীমান্ত থেকে অস্ত্র আসছে। বিহার থেকে অস্ত্র আসছে। উত্তরবঙ্গে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে।’’ তার পরেই পুলিশ-প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘নাকা- তল্লাশি বাড়াতে হবে, কড়া নজরদারি রাখতে হবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে রাতারাতি বাংলা-বিহার সীমানায় অতিরিক্ত নজরদারি রাতারাতি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। সে সঙ্গে নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় কড়া সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গে এসেছিলেন রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান তথা এডিজি আইবি রাজীব মিশ্র। সীমান্তবর্তী আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও গোয়েন্দা প্রধানের আলাদা বৈঠক হয়। সব বৈঠকে তিনি পঞ্চায়েতের আগে, রাজ্যে অশান্তির চেষ্টা রোখার জন্য নজরদারির কথা বলে গিয়েছেন। বিভিন্ন তথ্য জেলার পুলিশ সুপারেরাও তাঁকে জানান। এর পরে, এ দিন খোদ মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গকে অশান্ত করার অভিযোগ করেন। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে বিহার সীমানায় নজরদারি বেশি রয়েছে।’’
রাজ্য গোয়েন্দা দফতর ও পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত বিহারের মুঙ্গের ও ভাগলপুর থেকে উত্তর দিনাজপুর হয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বেআইনি অস্ত্র ঢোকে। সাধারণত, লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, বিহার থেকে উত্তরবঙ্গে অস্ত্র ঢোকে বেশি। অভিযোগ, রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকার জাতীয় ও রাজ্য সড়ক, গ্রামীণ পথ ও মাঠঘাট পেরিয়ে চোরাপথে অস্ত্র ঢোকে। তার পরে, বিভিন্ন জেলায় তা পৌঁছয়।
গত এক বছরে উত্তর দিনাজপুরে ৩০ জনের বেশি দুষ্কৃতীকে বেআইনি অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া বেশিরভাগ অস্ত্রই বিহারে তৈরি পাইপগান।
বিহার থেকে এ পারে লোক এনে অস্ত্র কারখানা চালানোর ঘটনাও ইতিমধ্যে সামনে এসেছে। মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরে বছর তিনেক আগেও একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস মিলেছিল। অভিযোগ, বিহারের মুঙ্গের থেকে কারিগরেরা কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরে ডেরা বেঁধে টাকার বিনিময়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করত। এখন বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আগ্নেয়াস্ত্র জেলায় ঢুকছে বলে দাবি পুলিশের একাংশের। পুলিশ জানিয়েছে, অক্টোবরে মালদহের মানিকচকে তিনটি পাইপগান ও তিন রাউন্ড কার্তুজ-সহ ঝাড়খণ্ডের রাজমহলের বাসিন্দা দুই কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুরাতন মালদহেও আগ্নেয়াস্ত্র-সমেত এক কারবারি গ্রেফতার হয়েছে।
অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার সমতলেও। এ দিন শিলিগুড়ির শহরের পাশে একটি চা বাগান থেকে হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে। এ জেলায় গত তিন মাসে খুব বিরাট সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সামনে না এলেও অনেক অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত অক্টোবরের প্রথম দিকে কোচবিহার শহরের মিনিবাস স্ট্যান্ড থেকে চারটি বন্দুক ও ছ’টি গুলি-সহ তপন সরকার নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কিছু দিন আগে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ বিহারের তিন জন বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওয়ান শটার ও সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। বিহারের মুঙ্গের থেকেই বেশিরভাগ অস্ত্র কোচবিহারে আসছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
(তথ্য সহায়তা: নমিতেশ ঘোষ, গৌর আচার্য ও অভিজিৎ সাহা)